পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88b" রবীন্দ্র-রচনাবলী বাঙালির কতটা অংশ আছে তাহার স্বল্প বিচার না করিয়া এ-কথা নিশ্চয় বলা যায় যে, কায় বা মন বা বাক্যে ইহাকে আমরা প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনো প্রকারে খাদ্য জোগাইয়াছি। অতএব যে-চিত্তদাহ কেবল পরিমিত স্থান লইয়া বদ্ধ থাকে নাই, প্রকৃতিভেদে যাহার উত্তেজনা আমরা প্রত্যেকে নানাপ্রকারে অনুভব ও প্রকাশ করিয়াছি, তাহারই একটা কেন্দ্রক্ষিপ্ত পরিণাম যদি এই প্রকার গুপ্ত বিপ্লবের অদ্ভুত আয়োজন হয় তবে ইহার দায় এবং দুঃখ বাঙালিমাত্রকেই স্বীকার করিতে হইবে। জর যখন সমস্ত শরীরকে অধিকার করিয়াই হইয়াছিল তখন হাতের তেলে কপালের চেয়ে ঠাণ্ড ছিল বলিয়াই মৃত্যুকালে নিজেকে সাধু ও কপালটাকেই যত নষ্টের গোড়া বলিয়া নিষ্কৃতি পাইবে না। আমরা কী করিব কী করিতে চাই সে-কথা স্পষ্ট করিয়া ভাবি নাই ; এই জানি, আমাদের মনে আগুন জলিয়াছিল ; সেই আগুন স্বভাবধর্মবশত ছড়াইয়া পড়িতেই ভিজা কাঠ ধোয়াইতে থাকিল, শুকনা কাঠ জলিতে লাগিল এবং ঘরের কোণে কোনপানে কেরোসিন ছিল সে আপনাকে ধারণ করিতে না পারিয়া টিনের শাসন বিদীর্ণ করিয়া একটা বিভীষিকা করিয়া তুলিল । তা যাই হ’ক, কার্যকারণের পরম্পরের যোগে পরস্পরের ব্যাপ্তি যেমন করিয়াই ঘটুক না কেন, তাই বলিয়া অগ্নি যপন অগ্নিকাণ্ড করিয়া তুলে তপন সব তর্ক ছাড়িয়া তাহাকে নিবৃত্ত করিতে হইবে এ-সম্বন্ধে মতভেদ হইলে চলিবে না । বিশেষত কারণটা দেশ হইতে দূর হয় নাই ; লোকের চিত্ত উত্তেজিত হইয়া আছে। উত্তেজনা এতই তীব্র যে, যে-সকল সাংঘাতিক ব্যাপার আমাদের দেশে অসম্ভব বলিয়া মনে করা যাইত তাহাও সম্ভবপর হইয়াছে। বিরোধবৃদ্ধি এতই গভীর এবং সুদূরবিস্তৃতভাবে ব্যাপ্ত যে, কর্তৃপক্ষ ইহাকে বলপূর্বক কেবল স্থানে স্থানে উংপাটিত করিতে চেষ্টা করিয়া কখনোই নিঃশেষ করিতে পরিবেন না, বরঞ্চ ইহাকে আরও প্রবল ও প্রকাও করিয়া তুলিবেন । தி: বর্তমান সংকটে রাজপুরুষদের কী করা কর্তব্য তাহা আলোচনা করিতে গেলে র্তাহারা শ্রদ্ধা করিয়া শুনিবেন বলিয়া ভরসা হয় না। আমরা তঁহাদের দ গুশালার দ্বারে বসিয়া তাহাদিগকে পোলিটিকাল প্রাজ্ঞতা শিক্ষা দিবার দুরাশ। রাখি না । আমাদের বলিবার কথাও অতি পুরাতন এবং শুনিলে মনে হইবে ভয়ে বলিতেছি । তবু সত্য পুরাতন হইলেও সত্য এবং তাহাকে ভুল বুঝিলেও তাহ সত্য। কথাটি এই—শক্তস্ত ভূষণং ক্ষমা–কথা আরও একটু আছে, ক্ষম শুধু শক্তের ভূষণ নহে সময়বিশেষে শক্তের ব্রহ্মাস্ত্রও ক্ষমা । কিন্তু আমরা যখন শক্তের দলে নহি তখন এই সাত্ত্বিক উপদেশটি লইয়া অধিক আলোচনা আমাদের পক্ষে শোভা পায় না ।