পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ዋ e রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রমাণ করিবার কালে বলিয়াছেন, ইলিয়ড কাব্য অধিকতর হিউম্যান, অর্থাং মানবচরিত্রের বাস্তবকে বেশি করিয়া স্বীকার করিয়াছে —কারণ উক্ত কাব্যে একিলিস নিহত শত্রুর মৃতদেহকে রথে বাধিয়া ট্রয়ের পথের ধুলায় লুটাইম্বা বেড়াইয়াছেন আর, রামায়ণে রাম পরাজিত শক্রকে ক্ষমা করিয়াছেন। ক্ষম। অপেক্ষা প্রতিহিংসা মানব" চরিত্রের পক্ষে অধিকতর বাস্তব এ-কথার অর্থ যদি এই হয় যে, তাহা পরিমাণে বেশি তবে তাহা স্বীকার করা যাইতে পারে । কিন্তু স্কুল পরিমাণই বাস্তবতা পরিমাপের একমাত্র বাটধারা এ-কথা মানুষ কোনোদিনই স্বীকার করিতে পারে না ; এইজন্যই মানুষ ঘরভরা অন্ধকারের চেয়ে ঘরের কোণের একটি ক্ষুদ্র শিপাকেই বেশি মান্য করিয়া থাকে । যাহাই হউক, এ-কথা সত্য যে, মানব-ইতিহাসের বহুতর উপকরণের মধ্যে কোনটা প্রধান কোনটা অপ্রধান, কোনটা বর্তমানের পক্ষে একান্ত বাস্তব এবং কোনটা নহে, তাহা একবার কেবল চোপে দেখিয়াই মীমাংসা করা যায় না । অবশু এ-কথা স্বীকার করিতে পারি, উত্তেজনার সময় উত্তেজনাটাকেই সকলের চেয়ে বড়ো সত্য বলিয়া মনে হয়। রাগের সময় এমন কোনো কথাকেই বাস্তবমূলক বলিয়া মনে হয় না যাহা রাগকে নিবৃত্ত করিবার জন্য দণ্ডায়মান হয়। এরূপ সময় মানুষ সহজেই বলিয়া উঠে, “রেখে দাও তোমার ধর্মকথা।” বলে যে, তাহার কারণ এ নয় যে, ধর্মকথাটাই বাস্তব প্রয়োজনের পক্ষে অযোগ এবং রুষ্ট বুদ্ধিই তদপেক্ষ উপযোগী । কিন্তু তাঙ্গর কারণ এই যে, বাস্তব উপযোগিতার প্রতি আমি দৃকপাত করিতে চাই না, বাস্তব প্রবৃত্তি-চরিতার্থতাকেই আমি মান্ত করিতে চাই । কিন্তু প্রবৃত্তি-চরিতার্থতাতে বাস্তবের হিসাব অল্পই করিতে হয়, উপযোগিতায় তাহার চেয়ে অনেক বেশি করা আবশ্বক। মুটনির পর যে ইংরেজরা ভারতবর্ষকে নির্দয়ভাবে দলন করিতে পরামর্শ দিয়াছিল তাহারা মানবচরিত্রের বাস্তবের হিসাবটাকে অত্যস্ত সংকীর্ণ করিয়াই প্রস্তুত করিয়াছিল ; রাগের সময় এই প্রকার সংকীর্ণ হিসাব করাই যে স্বাভাবিক অর্থাং মাথাগনতিতে অধিকাংশ লোকই করিয়া থাকে তাহ ঠিক, কিন্তু লর্ড ক্যানিং ক্ষমার দিক দিয়া যে বাস্তবের হিসাব করিয়াছিলেন তাহ প্রতিহিংসার হিসাব অপেক্ষ বাস্তবকে অনেক বৃহংপরিমাণে অনেক গভীর এবং দূরবিকৃতভাবেই গণনা করিয়াছিল । কিন্তু যাহার ক্রুদ্ধ তাহার ক্যানিঙের ক্ষমানীতিকে সেণ্টিমেন্টালিজম অর্থাং বাস্তববর্জিত ভাববাতিকতা বলিতে নিশ্চয়ই কুষ্ঠিত হয় নাই। চিরদিনই এইরূপ হইয়া আসিয়াছে। যে-পক্ষ অক্ষৌহিণী সেনাকেই গণনাগৌরবে বড়ো সত্য বলিয়া