পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী হে গিরি, যৌবন তব যে দুর্দম অগ্নিতাপবেগে আপনারে উৎসারিয়া মরিতে চাহিয়াছিল মেঘে— সে তাপ হারায়ে গেছে, সে প্রচণ্ড গতি অবসান, নিরুদ্দেশ চেষ্টা তব হয়ে গেছে প্রাচীন পাষাণ । পেয়েছ আপন সীমা, তাই আজি মৌন শাস্ত হিয়৷ সীমাবিহীনের মাঝে আপনারে দিয়েছ সঁপিয়া । ૨ઉ ক্ষান্ত করিয়াছ তুমি আপনারে, তাই হেরো আজি তোমার সর্বাঙ্গ ঘেরি পুলকিছে শু্যাম শম্পরাজি প্রস্ফুটিত পুষ্পজগলে ; বনস্পতি শত বরষার আনন্দবৰ্ষণকাব্য লিপিতেছে পত্রপুঞ্জে তার বন্ধলে শৈবালে জটে ; সুদুৰ্গম তোমার শিপর নির্ভয় বিহঙ্গ যত কলোল্লাসে করিছে মুপর । আসি নরনারীদল তোমার বিপুল বক্ষপটে যেদিন উঠিয়ছিলে অগ্নিতেজে স্পধিতে আকাশ, কম্পমান ভূমণ্ডলে, চন্দ্রস্বর্য করিবারে গ্রাস,-- সেদিন, হে গিরি, তব এক সঙ্গী আছিল প্রলয় ; যখনি থেমেছ তুমি বলিয়াছ, “আর নয়, নয়,” চারিদিক হতে এল তোমা’পরে আনন্দ-নিশ্বাস, তোমার সমাপ্তি ঘেরি বিস্তারিল বিশ্বের বিশ্বাস । रै७ আজি হেরিতেছি আমি, হে হিমাদ্রি, গভীর নির্জনে পাঠকের মতো তুমি বসে আছ আচল আসনে, সনাতন পুথিখানি তুলিয়া লয়েছ অস্ক’পরে । পাষাণের পত্রগুলি খুলিয়া গিয়াছে থরে থরে, পড়িতেছ একমনে । ভাঙিল গড়িল কত দেশ, গেল এল কত যুগ—পড়া তব হইল না শেষ ।