পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী

এই মহাযাত্ৰা দীৰ্ঘকাল কেবল ছুটাছুটি-দোঁড়াদোঁড়ি, ডাকাডাকি-হাকাহাকিতেই নষ্ট হইতে থাকিবে। ১৩১৩

সভাপতির অভিভাষণ পাবনা প্ৰাদেশিক সন্মিলনী

অদ্যকার এই মহাসভায় সভাপতির আসনে আঙ্গবান করিয়া আপনারা আমাকে য-সন্মান দান করিয়াছেন, আমি তাহার অযোগ্য এ-কথার উল্লেখমাত্ৰও বাহুল্য। বস্তুত এরপ সন্মান গ্ৰহণ করা সহজ, বহন করাই কঠিন। অযোগ্য লোককে উচ্চপদে বসানো তাহাকে অপদস্থ করিবারই উপায়।

অন্য সময় হইলে এতবড়ো দুঃসাধ্য দায়িত্ব হইতে নিস্কৃতি লাভের চেষ্টা করিতাম॥ কিন্তু বৰ্তমানে আমাদের আত্মবিচ্ছেদের সংকটকালে যপন ডাঙায় বাঘ ও জলে কুমির, যখন রাজপুরুষ কালপুরুষের মূৰ্তি ধরিয়াছেন এবং আত্মীয়সমাজেও পরম্পরের প্রতি কেই ধৈৰ্য অবলম্বন করিতে পারিতেছেন না—যখন নিশ্চয় জানি অদ্যকার দিনে সভাপতির আসন সুখের আসন নহে এবং হয়তো ইহা সম্মানের আসনও না হইতে পারে অপমানের আশঙ্কা চতুৰ্দিকেই পুঞ্জীভূত— তখন আপনাদের এই আমন্ত্ৰণে বিনয়ের উপলক্ষ্য করিয়া আজ আর কাপুরুষের মতো ফিরিয়া যাইতে পারিলাম না এবং বিশ্ব জগতের সমস্ত বৈচিত্ৰ্য ও বিরোধের মাঝখানে “য একঃ” যিনি এক, “অবৰ্ণঃ” মানব সমাজের বিবিধ জাতির মাঝখানে জাতিহীন যিনি বিরাজমান, যিনি “বহুধা শক্তিযোগাং বৰ্ণান্‌ অনেকান নিহিতাৰ্থে দধতি” বহুধা শক্তির দ্বারা নানা জাতির নানা প্ৰয়োজন বিচিত্ৰক্লপে সম্পাদন করিতেছেন, “বিচৈতিচান্তে বিশ্বমাদেী” বিশ্বের সমস্ত আরম্ভেও যিনি, সমস্ত পরিণামেও যিনি, “স দেব, স নো বুদ্ধ্যা শুভয়া সংযুনাক্ত” সেই দেবতা, তিনি আমাদের এই মহাসভায় শুভবুদ্ধিস্বরপ বিদ্যমান থাকিয়া আমাদের হৃদয় হইতে সমস্ত ক্ষুদ্ৰতা অপসারিত করিয়া দিন, আমাদের চিত্তকে পরিপূৰ্ণ প্ৰেমে সম্মিলিত এবং আমাদের চেষ্টাকে সুমহং লক্ষ্যে নিবিষ্ট করুন, একান্তমনে এই প্ৰাৰ্থনা করিয়া, অযোগ্যতার বাধা সত্তেও এই মহাসভায় সভাপতির আসন গ্ৰহণ করিতেছি। বিশেষত জানি এমন সময় আসে যখন অযোগ্যতাই বিশেষ যোগ্যতার স্বয়প হইয়া উঠে।