পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ >b" রবীন্দ্র-রচনাবলী সকলের বুকে পড়িতেছে না কেন ? বাংলাদেশের এই বক্ষের ভারকে আমরা সকলে মিলিয়া ভাগ করিয়া লইয়া বেদনাকে সমান করিয়া তুলিব না কেন ? স্বদেশী-প্রচার যদি অপরাধ হয় তবে পুনিটিভ পুলিসের ব্যয়ভার আমরা সকল অপরাধীই বাটিয়া লইব । এই বেদন যদি সকল বাঙালির সামগ্ৰী হইয় উঠে তবে ইহা আর বেদনাই থাকিবে না,* जांनमझे इझेब्रां ऊँठिएव । এই উপলক্ষে দেশের জমিদারের প্রতি আমার নিবেদন এই যে, বাঙলার পল্লীর মধ্যে প্রাণসঞ্চারের জন্য র্তাহারা উদযোগী না হইলে এ-কাজ কখনোই সুসম্পন্ন হইবে না। পল্লী সচেতন হইয়া নিজের শক্তি নিজে অমুভব করিতে থাকিলে জমিদারের কর্তৃত্ব ও স্বার্থ খর্ব হইবে বলিয়া আপাতত আশঙ্কা হইতে পারে—কিন্তু এক পক্ষকে দুর্বল করিয়া নিজের স্বেচ্ছাচারের শক্তিকে কেবলই বাধাহীন করিতে থাকা আর ডাইনামাইট বুকের পকেটে লইয়া বেড়ানো একই কথা—একদিন প্রলয়ের অস্ত্র বিমুখ হইয়া অস্ত্রীকেই বধ করে। রায়তদিগকে এমনভাবে সবল ও শিক্ষিত করিয়া রাখা উচিত যে, ইচ্ছ। করিলেও তাঁহাদের প্রতি অন্যায়, করিবার প্রলোভনমাত্র জমিদারের মনে না উঠিতে পারে। জমিদার কি বণিকের মতো কেবল দীনভাবে আদায় করিবার পথগুলিই সর্বপ্রকারে মুক্ত রাখিবেন ? কিন্তু সেইসঙ্গে মহংভাবে স্বাৰ্থত্যাগ করিবার সম্বন্ধ যদি একান্ত যত্বে না রক্ষা করেন, উচিত ক্ষতি উদারভাবে স্বীকার করিবার শক্তি যদি তাহার না থাকে তবে তাহার আত্মসম্মান কেমন করিয়া থাকিবে ? রাজহাটে উপাধি কিনিবার বেলায় তিনি তো লোকসানকে লোকসান জ্ঞান করেন না ? কিন্তু যথার্থ রাজা হইবার একমাত্র স্বাভাবিক অধিকার আছে তাহার রায়তদের কাছে । তিনি যে বহুতর লোকের প্রভু, বন্ধু ও রক্ষক, বহুলোকের মঙ্গলবিধানকর্তা, পৃথিবীতে এতবড়ে উচ্চপদলাভ করিয়া এ-পদের দায়িত্ব রক্ষা করিবেন না ? এ-কথা যেন না মনে করি যে, দূরে বসিয়া টাকা ঢালিতে পারিলেই রায়তের হিত করা যায়। এ-সম্বন্ধে একটি শিক্ষা কোনোদিন ভুলিব না। একসময়ে আমি মফস্বলে কোনো জমিদারি তত্ত্বাবধানকালে সংবাদ পাইলাম, পুলিসের কোনো উচ্চ কর্মচারী কেবল যে একদল জেলের গুরুতর ক্ষতি করিয়াছে তাহা নহে, তদস্তের উপলক্ষ্য করিয়া তাহাদের গ্রামে গৃহস্থদের মধ্যে বিষম অশাস্তি উপস্থিত করিয়াছে। আমি উৎপীড়িত জেলেদের ডাকিয়া বলিলাম, তোরা উৎপাতকারীর নামে দেওয়ানি ও ফৌজদারি যেমন ইচ্ছা নালিশ কর আমি কলিকাতা হইতে বড়ে কৌমুলি আনাইয়। মকদ্দমা চালাইব । তাহার হাত জোড় করিয়া কহিল, কর্তা, মামলায় জিতিয়া লাভ কী ? পুলিসের বিরুদ্ধে দাড়াইলে আমরা ভিটায় টিকিতেই পারিব না।