পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@ Ե Հ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী । একেই বলে শিক্ষার জন্যে দরদ ? আমি তো একজন জমিদার, আমার প্রজাদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্যে কিছু দিয়েও থাকি- আরো দ্বিগুণ তিনগুণ যদি দিতে হয় তো তাও দিতে রাজি আছি, কিন্তু এই কথাটা প্রতিদিন তাদের বুঝিয়ে দেওয়া দরকার হবে যে, আমি তাদের আপনি লোক, তাদের শিক্ষায় আমারই মঙ্গল এবং আমিই তাদের দিচ্ছি, দিচ্ছে না। এই রাজ্যশাসকদের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন শ্রেণীর KI SING KS 1933.G3 || সোভিয়েট রাশিয়ায় জনসাধারণের উন্নতিবিধানের চাপ খুবই বেশি, সেজন্যে আহারে বিহারে লোকে কষ্ট পাচ্ছে কম নয়, কিন্তু এই কষ্টের ভাগ উপর থেকে নীচে পর্যন্ত সকলেই নিয়েছে । তেমন কষ্টকে তো কষ্ট বলব না, সে যে তপস্যা । প্ৰাথমিক শিক্ষার নামে কণামাত্র শিক্ষা চালিয়ে ভারত-গবমেন্ট এতদিন পরে দুশো বছরের কলঙ্ক মোচন করতে চান— অথচ তার দাম দেবে তারাই । যারা দাম দিতে সকলের চেয়ে অক্ষম ; গবমেন্টের প্রশ্ৰয়ালালিত বহবাশী বাহন যারা তারা নয়, তারা আছে গৌরব ভোগ করবার জন্যে । আমি নিজের চোখে না দেখলে কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারতুম না যে, অশিক্ষা ও অবমাননার নিম্নতম তল থেকে আজ কেবলমাত্র দশ বৎসরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে এরা শুধু ক খ গ ঘ শেখায় নি, মনুষ্যত্বে সম্মানিত করেছে । শুধু নিজের জাতকে নয়, অন্য জাতের জন্যেও-এদের সমান চেষ্টা । অথচ সাম্প্রদায়িক ধর্মের মানুষেরা এদের অধাৰ্মিক বলে নিন্দা করে । ধর্ম কি কেবল পুঁথির মন্ত্রে দেবতা কি কেবল মন্দিরের প্রাঙ্গণে । মানুষকে যারা কেবলই ফাকি দেয় দেবতা কি তাদের কোনোখানে আছে । অনেক কথা বলবার আছে । এরকম তথ্য সংগ্রহ করে লেখা আমার অভ্যস্ত নয়, কিন্তু না-লেখা আমার অন্যায় হবে বলে লিখতে বসেছি । রাশিয়ার শিক্ষাবিধি সম্বন্ধে ক্ৰমে ক্ৰমে লিখিব বলে আমার সংকল্প আছে । কতবার মনে হয়েছে আর-কোথাও নয়, রাশিয়ায় এসে একবার তোমাদের সব দেখে যাওয়া উচিত । ভারতবর্ষ থেকে অনেক চর। সেখানে যায়, বিপ্লবপহীরাও আনাগোনা করে ; কিন্তু আমার মনে হয় কিছুর জন্যে নয়, কেবল শিক্ষাসম্বন্ধে শিক্ষা করতে যাওয়া আমাদের পক্ষে একান্ত দরকার । لار" যাক, আমার নিজের খবর দিতে উৎসাহ পাই নে । আমি যে আটিস্ট এই অভিমান মনে প্রবল হবার আশঙ্কা আছে । কিন্তু এ পর্যন্ত বাইরে খ্যাতি পেয়েছি, অস্তরে পৌছয় না । কেবলই মনে হয়, দৈবগুণে পেয়েছি, নিজগুণে নয় । ভাসছি এখন মােঝ-সমুদ্রে । পারে গিয়ে কপালে কী আছে জানি নে । শরীর ক্লান্ত, মন অনিচ্ছক । শূন্য ভিক্ষণপাত্রের মতো ভারী জিনিস জগতে আর কিছুই নেই, সেটা জগন্নাথকে শেষ নিবেদন করে দিয়ে কবে আমি ছুটি পাব । ইতি ৫ অক্টোবর ১৯৩০ al SO D. Bremen বিজ্ঞানশিক্ষায় পুঁথির পড়ার সঙ্গে চোখের দেবার যোগ থাকা চাই, নইলে সে শিক্ষার বারো-আনা র্যােগকি হয় । শুধু বিজ্ঞান কেন, অধিকাংশ শিক্ষাতেই এ কথা খাটে । রাশিয়াতে বিবিধ বিষয়ের মজিয়মের যোগে সেই শিক্ষার সহায়তা করা হয়েছে । এই মজিয়াম শুধু বড়ো বড়ো শহরে নয়, প্রদেশে প্রদেশে, সামান্য পল্লীগ্রামের লোকেরও আয়ত্তগোচরে । চোখে দেখে শেখার আর-একটা প্ৰণালী হচ্ছে ভ্ৰমণ । তোমরা তো জানই আমি অনেকদিন থেকেই ভ্ৰমণ-বিদ্যালয়ের সংকল্প মনে বহন করে এসেছি । ভারতবর্ষ এতবড়ো দেশ, সকল বিষয়েই তার এত