পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩২ রবীন্দ্র-রচনাবলী পচাইয়া হাওয়া খারাপ করিবার দরকার ? ইহাতে পরেরটাও নষ্ট হয়, নিজেরটাও মাটি হইয়া যায়। সমস্ত মাটি করিবার সেই আয়োজন বাংলাদেশেই দেখিতেছি। তবে কি পরিবর্তন হইবে না। যেখানে যাহা আছে, চিরকাল কি সেখানে তাহ একই ভাবে চলে। প্রয়োজনের নিয়মে পরিবর্তন হইবে, অমুকরণের নিয়মে নহে। কারণ, অন্থকরণ অনেক সময়ই প্রয়োজনবিরুদ্ধ। তাহ সুখশাস্তিস্বাস্থ্যের অমুকুল নহে। চতুর্দিকের অবস্থার সহিত তাহার সামঞ্জস্য নাই। তাহাকে চেষ্টা করিয়া আনিতে হয়, কষ্ট করিয়া রক্ষা করিতে হয় । অতএব রেলওয়ে-ভ্রমণের জন্য, আপিসে বাহির হইবার জন্য, নূতন প্রয়োজনের জন্য ছাট-কাটা কাপড় বানাইয়। লও। সে তুমি নিজের দেশ, নিজের পরিবেশ, নিজের পূর্বাপরের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া প্রস্তুত করে। সম্পূর্ণ ইতিহাসবিরুদ্ধ ভাববিরুদ্ধ সংগতিবিরুদ্ধ অনুকরণের প্রতি হতবুদ্ধির ন্যায় ধাবিত হইয়ে না। পুরাতনের পরিবর্তন ও নূতনের নির্মাণে দোষ নাই। আবশ্বকের অনুরোধে তাহ সকল জাতিকেই সর্বদা করিতে হয়। কিন্তু এরূপ স্থলে সম্পূর্ণ অনুকরণ প্রয়োজনের দোহাই দিয়া চলে না। সে প্রয়োজনের দোহাই একটা ছুতামাত্র। কারণ সম্পূর্ণ অনুকরণ কখনই সম্পূর্ণ উপযোগী হইতে পারে না। তাহার হয়তে একাংশ কাজের হইতে পারে, অপরাংশ বাহুল্য। তাহার ছাটা কোর্ত হয়তো দৌড়ধাপের পক্ষে প্রয়োজনীয় হইতে পারে, কিন্তু তাহার ওয়েস্টকোট হয়তো অনাবশ্যক এবং উত্তাপজনক। তাহার টুপিটা হয়তে খপ করিয়া মাথায় পর সহজ হইতে পারে, কিন্তু তাহার টাই-কলার বাধিতে অনর্থক সময় দিতে হয়। যেখানে পরিবর্তন ও নূতন নির্মাণ অসম্ভব ও সাধ্যাতীত, সেইখানেই অনুকরণ মার্জনীয় হইতে পারে। বেশভূষায় সে-কথা কোনোক্রমেই খাটে না । বিশেষত বেশভূষায় কেবলমাত্র অঙ্গাবরণের প্রয়োজন সাধন করে না, তাহাতে ভদ্রাভদ্র, দেশী-বিদেশী, স্বজাতি-বিজাতির পরিচয় দেওয়া হয়। ইংরেজি কাপড়ের ভদ্রতা ইংরেজ জানে। আমাদের ভদ্রলোকদের অধিকাংশের তাহ জানিবার সম্ভাবনা নাই। জানিতে গেলেও সর্বদাই ভয়ে ভয়ে পরের মুখ তাকাইতে হয়। তার পরে স্বজাতি-বিজাতির কথা । কেহ কেহ বলেন, স্বজাতির পরিচয় লুকাইবার জন্যই বিলাতি কাপড়ের প্রয়োজন হয়। এ কথা বলিতে যাহার লজ্জাবোধ না হয়,তাহাকে লজ্জা দেওয়া কাহারও সাধ্য নহে, পরের বাড়িতে ছদ্মবেশে সম্বন্ধী সাজিয়া গেলে আদর পাওয়৷ যাইতে পারে, তবু যাহার