পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8 ० রবীন্দ্র-রচনাবলী অামার স্ত্রী এবং মাঝখানে একটি কচি খোকা নিয়ে তালপাতার হাতপাখা খেয়ে রাত্রিযাপন করি । কিন্তু আশ্চর্য এই, তবু আমরা নিতান্ত অধম নই। আমাদের কোঁচ কাপে ট কেদারা নেই বললেই হয়, কিন্তু তবুও তো আমাদের দয়ামায়া ভালোবাসা আছে। তক্তপোশের উপর অর্ধশয়ান অবস্থায় এক হাতে তাকিয়া অঁাকড়ে ধরে তোমাদের সাহিত্য পড়ি, তবুও তো অনেকটা বুঝতে পারি এবং সুখ পাই ; ভাঙা প্রদীপে খোল গায়ে তোমাদের ফিলজফি অধ্যয়ন করে থাকি, তৰু তার থেকে এত বেশি আলো পাই যে আমাদের ছেলেরাও অনেকটা তোমাদেরই মতো বিশ্বাসবিহীন হয়ে আসছে। আমরাও আবার তোমাদের ভাব বুঝতে পারি নে। কোঁচ-কেদার খেলাধুলা তোমরা এত ভালোবাস যে স্ত্রীপুত্র না হলেও তোমাদের বেশ চলে যায়। আরামটি তোমাদের আগে, তার পরে ভালোবাসা ; আমাদের ভালোবাসা নিতান্তই অবশ্যক, তার পরে প্রাণপণ চেষ্টায় ইহজীবনে কিছুতেই আর আরামের জোগাড় হয়ে ওঠে না। অতএব আমরা যখন বলি, আমরা যে বিবাহ করে থাকি সেটা কেবলমাত্র আধ্যাত্মিকতার প্রতি লক্ষ রেখে পরিত্রিক মুক্তিসাধনের জন্য, কথাটা খুব জাকালে শুনতে হয় কিন্তু তবু সেটা মুখের কথা মাত্র, এবং তার প্রমাণ সংগ্রহ করবার জন্য আমাদের বর্তমান সমাজ পরিত্যাগ করে প্রাচীন পুথির পাতার মধ্যে প্রবেশপূর্বক ব্যস্তভাবে গবেষণা করে বেড়াতে হয়। প্রকৃত সত্য কথাটা হচ্ছে, ও না হলে আমাদের চলে না, আমরা থাকতে পারি নে। আমরা শুশুকের মতো কর্মতরঙ্গের মধ্যে দিগবাজি খেলে বেড়াই বটে, কিন্তু চট্‌ ক’রে অমনি যখন-তখন অন্তঃপুরের মধ্যে ভূস করে হাফ ছেড়ে না এলে আমরা বাচি নে । যিনি যা-ই বলুন, সেটা পারলৌকিক সদগতির জন্তে নয় । এমন অবস্থায় আমাদের সমাজের ভালো হচ্ছে, কি মন্দ হচ্ছে, সে কথা এখানে বিচার্য নয়, সে কথা নিয়ে অনেক বাদ-প্রতিবাদ হয়ে গেছে। এখানে কথা হচ্ছিল, আমাদের স্ত্রীলোকেরা সুখী কি অসুখী । আমার মনে হয় আমাদের সমাজের যেরকম গঠন, তাতে সমাজের ভালোমন্দ যা-ই হোক আমাদের স্ত্রীলোকেরা বেশ একরকম সুখে আছে। ইংরেজেরা মনে করতে পারেন লনটেনিস না খেললে এবং ‘বলে’ ন! নাচলে স্ত্রীলোক স্বর্থী হয় না, কিন্তু আমাদের দেশের লোকের বিশ্বাস, ভালোবেসে এবং ভালোবাসা পেয়েই স্ত্রীলোকের প্রকৃত সুখ । তবে সেটা একটা কুসংস্কার হতেও পারে। আমাদের পরিবারে নারীহৃদয় যেমন বিচিত্রভাবে চরিতার্থতা লাভ করে এমন