পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 8Գծ জানে, এবং সেই ভ্রমবশতই বাসনাপাশে বদ্ধ হইয়া দুঃখের কষাঘাতে জর্জরিত হইতে থাকে। এ মত গ্রহণ করিলে অস্তিত্ব হইতে মুক্তিলাভের চেষ্টাই একমাত্র উদ্দেশু হইয়া দাড়ায় । বিষয়বাসনা, সমাজবন্ধন, পারিবারিক স্নেহপ্রেম, এমন-কি, ক্ষুধাতৃষ্ণা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতিও বিনাশ করিয়া একপ্রকার সংজ্ঞাহীন জড়ত্বকেই ব্রহ্মসম্মিলনের লক্ষণ বলিয়া বিশ্বাস করিতে হয় । বৌদ্ধগণ ব্রাহ্মণদিগের এই মত গ্রহণ করিয়া সন্তুষ্ট ছিলেন না ; তাহারা আত্মা এবং ব্রহ্মের সত্তাও লোপ করিয়া দিলেন । কারণ, কোথাও কোনো অস্তিত্বের লেশমাত্রও স্বীকার করিলে পুনরায় তাহা হইতে দুঃখের অভিব্যক্তি অবশুম্ভাবী বলিয়া মানিতে হয়। এমন-কি, হিন্দুশাস্ত্রের নিগুণ ব্রহ্মের মতো এমন একটা নাস্তিবাচক অস্তিত্বকেও র্তাহারা কোথাও স্থান দিতে সাহস করিলেন না । বুদ্ধ বলিলেন, বস্তুই বা কী আর মনই বা কী, কিছুর মধ্যেই নিত্যপদার্থ নাই ; অনন্ত বিশ্বমরীচিকা কেবল স্বপ্নপ্রবাহমাত্র । স্বপ্ন দেখিবার বাসনা একবার ধ্বংস করিতে পারিলেই মানুষের মুক্তি হয়, এবং ব্রহ্ম ও আত্মা নামক কোনো নিত্যপদার্থ না থাকাতে একবার নির্বাণলাভ করিলে আর দ্বিতীয়বার অস্তিত্বলাভের সম্ভাবনামাত্র থাকে না । প্রাচীন গ্রীসে স্টোয়িক সম্প্রদায় যখন জগৎকারণ ঈশ্বরে অসীম সদগুণের আরোপ করিলেন তখন তাহার স্বস্ট বিশ্বজগতে অমঙ্গলের অস্তিত্ব কিরূপে সম্ভব হইল, ইহাই এক সমস্যা দাড়াইল । র্তাহারা বলিলেন, প্রথমত জগতে অমঙ্গল নাই ; দ্বিতীয়ত যদি-বা থাকে তাহ মঙ্গলেরই আনুষঙ্গিক ; এবং যেটুকু আছে তাহা আমাদের নিজদোষে নয় আমাদের ভালোরই জন্ত । হক্সলি বলেন, অমঙ্গলের মধ্যেও যে মঙ্গলের অস্তিত্ব দেখা যায় তাহাতে সন্দেহ নাই এবং দুঃখ কষ্ট যে অনেক সময় আমাদের শিক্ষকের কার্য করে তাহাও সত্য ; কিন্তু অসংখ্য মূঢ় প্রাণী, যাহারা এই শিক্ষায় কোনো উপকার পায় না এবং যাহাদিগকে কোনো কাজের জন্ত দায়িক করা যাইতে পারে না, তাহারা যে কেন দুঃখভোগ করে এবং অনন্তশক্তিমান কেনই-বা সর্বতোভাবে দুঃখপাপহীন করিয়া জগৎস্বজন না করিলেন, স্টোয়িকগণ তাহার কোনো উত্তর দিলেন না। জগতে যাহা-কিছু আছে তাহাই সর্বাপেক্ষা উত্তম, এ কথা স্বীকার করিলে কোথাও কোনো সংশোধনের চেষ্টা না করিয়া সম্পূর্ণ উদাসীন হইয়া বসিয়া থাকাই কর্তব্য হইয়া দাড়ায়। কিন্তু বাহাজগৎ যে মানুষের ধর্মশিক্ষাস্থল, সর্বমঙ্গলবাদী স্টোয়িকদের নিকটও তাহা