পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চণ্ডালিকা প্রথম দৃশ্য মা। প্রকৃতি, ও প্রকৃতি ! গেল কোথায় ! কী জানি কী হল মেয়েটার। ঘরে দেখতেই পাই নে । প্রকৃতি । এই-যে, মা, এখানেই আছি। মা ! কোথায় ! প্রকৃতি । এই—যে কুয়োতলায়। মা । আশ্চর্যকরলি তুই। বেলা গেল দুপুর পেরিয়ে, কাঠফাটা রোদ, মাটি উঠেছে তেতে, পা ফেলা যায় না। ঘরের জল কোন সকালে তোলা হয়ে গেছে। পাড়ার মেয়েরা সবাই জল নিয়ে গেল। ঘরে । ঐ দেখ, ঠোঁট মেলে গরমে কাক ধুকছে আমলকীগাছের ডালে। তুই এই বৈশেখের রোদ পোয়াচ্ছিস বিনি কাজে । পুরাণকথা শুনেছি, উমা তপ করেছিলেন ঘর ছেড়ে বাইরে, রোদে পুড়ে ; তোর কি তাই श्न ? প্রকৃতি । হা, মা, তপ করছি তো বটে। মা | অবাক করলে ! কার জন্যে । প্রকৃতি । যে আমাকে ডাক দিয়েছে। 5R যে আমারে দিয়েছে ডাক, দিয়েছে ডাক, বচনহারা আমাকে যে দিয়েছে বাক । যে আমারি নাম জেনেছে ওগো তারি নামখানি মোর হৃদয়ে থাক । মা । কিসের ডাক ? প্রকৃতি । আমার মনের মধ্যে বাজিয়ে দিয়ে গেছে “জল দাও”। মা । পোড়া কপাল ! তোকে বলেছে "জল দাও” ! কে শুনি । তোর আপনি জাতের কেউ ? প্রকৃতি । তাই তো বললেন, তিনি আমার আপনি জাতেরই। মা। জাত লুকোস নি ? বলেছিলি যে তুই চণ্ডালিনী ? প্রকৃতি । বলেছিলেম । তিনি বললেন, মিথ্যে কথা । তিনি বললেন, শ্রাবণের কালো মেঘকে চণ্ডাল নাম দিলেই বা কী, তাতে তার জাত বদলায় না, তার জলের ঘোচে না গুণ । তিনি বললেন, নিন্দে কোরো না নিজেকে । আত্মনিন্দ পাপ, আত্মহত্যার চেয়ে বেশি । মা ! তোর মুখে এ-সব কী শুনছি। তোর কি মনে পড়েছে পূৰ্ব্বজন্মের কোনো কাহিনী । প্রকৃতি । এ কাহিনী আমার নতুন জন্মের । মা । হাসালি তুই । নতুন জন্ম ! ঘটল কবে । প্রকৃতি । সেদিন রাজবাড়িতে বাজল বেলা-দুপুরের ঘণ্টা, বা ঝা করছে রোদন্দুর । মা-মরা বাছুরটাকে নাওয়াচ্ছিলুম কুয়োর জলে । কখন সামনে দাঁড়ালেন বৌদ্ধ ভিক্ষু, পীত বসন তঁর । বললেন, জল দাও । প্ৰাণটা উঠল চমকে, শিউরে উঠে প্ৰণাম করলেম দূর থেকে । ভোর বেলাকার