পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ఫిలిపి অন্ত সময় হইলে ভূপতি অমলকে পরিহাস করিত, কিন্তু আজ তাহার সে প্রফুল্লতা ছিল না । সে বলিল, “পাগল হয়েছ নাকি ৷” অমল আবার জিজ্ঞাসা করিল, “বোঠান কিছু বলেন নি ?” ভূপতি । তোমাকে ভালোবাসেন বলে যদি কিছু বলে থাকেন তাতে রাগ করবার কোনো কারণ নেই। অমল। কাজকর্মের চেষ্টায় এখন আমার অন্যত্র যাওয়া উচিত । ভূপতি ধমক দিয়া কহিল, “অমল, তুমি কী ছেলেমাস্তুষি করছ তার ঠিক নেই। এখন পড়াশুনো করো, কাজকর্ম পরে হবে।” অমল বিমর্ষমুখে চলিয়া আসিল, ভূপতি তাহার কাগজের গ্রাহকদের মূল্যপ্রাপ্তির তালিকার সহিত তিন বৎসরের জমাখরচের হিসাব মিলাইতে বসিয়া গেল । দশম পরিচ্ছেদ অমল স্থির করিল, বউঠানের সঙ্গে মোকাবিলা করিতে হইবে, এ কথাটার শেষ না করিয়া ছাড়া হইবে না। বোঠানকে যে-সকল শক্ত শক্ত কথা শুনাইবে মনে মনে তাহ আবৃত্তি করিতে লাগিল । মন্দা চলিয়া গেলে চারু সংকল্প করিল, অমলকে সে নিজে হইতে ডাকিয়া পাঠাইয়৷ তাহার রোষশান্তি করিবে। কিন্তু একটা লেখার উপলক্ষ করিয়া ডাকিতে হইবে । অমলেরই একটা লেখার অনুকরণ করিয়া ‘অমাবস্তার আলো’ নামে সে একটা প্রবন্ধ ফাদিয়াছে। চারু এটুকু বুঝিয়াছে যে তাহার স্বাধীন ছাদের লেখা অমল পছন্দ করে না । পূর্ণিমা তাহার সমস্ত আলোক প্রকাশ করিয়া ফেলে বলিয়া চারু তাহার নূতন রচনায় পূর্ণিমাকে অত্যন্ত ভংসনা করিয়া লজ্জা দিতেছে। লিখিতেছে— অমাবস্তার অতলস্পর্শ অন্ধকারের মধ্যে ষোলোকলা চাদের সমস্ত আলোক স্তরে স্তরে আবদ্ধ হইয়া আছে, তাহার এক রশ্মিও হারাইয়া যায় নাই— তাই পূর্ণিমার উজ্জ্বলতা অপেক্ষ অমাবস্তার কালিম পরিপূর্ণতর— ইত্যাদি। অমল নিজের সকল লেখাই সকলের কাছে প্রকাশ করে এবং চারু তাহ করে না— পূর্ণিমা-অমাবস্তার তুলনার মধ্যে কি সেই কথাটার আভাস আছে। এ দিকে এই পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি ভূপতি কোনো আসন্ন ঋণের তাগিদ হইতে মুক্তিলাভের জন্য তাহার পরম বন্ধু মতিলালের কাছে গিয়াছিল।