পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ S)SS সতীশের প্রবেশ সতীশ । মাসিম, পালাতে হবে না। এই দেখে, আমার হাতে অস্ত্রশস্ত্র কিছুই নেই – কেবল খানকয়েক নোট আছে । শশধর । ইস্ ! এ যে একতাড়া নোট ! যদি আপিসের টাকা হয় তো এমন করে সঙ্গে নিয়ে বেড়ানো ভালো হচ্ছে না, সতীশ । সতীশ । আর সঙ্গে নিয়ে বেড়াব না। মাসিমার পায়ে বিসর্জন দিলাম । প্রণাম হই, মাসিমা । বিস্তর অনুগ্রহ করেছিলে— তখন তার হিসাব রাখতে হবে মনেও করি নি, স্বতরাং পরিশোধের অঙ্কে কিছু ভুলচুক হতে পারে। এই পনেরো হাজার টাকা গুনে নাও । তোমার খোকার পোলাও-পরমান্নে একটি তণ্ডুলকণাও কম না পড়ুক । শশধর । এ কী কাণ্ড সতীশ । এত টাকা কোথায় পেলে । সতীশ । আমি গুনচট আজ ছয় মাস আগাম খরিদ করে রেখেছি— ইতিমধ্যে দর চড়েছে ; তাই মুনফা পেয়েছি। শশধর । সতীশ, এ যে জুয়াখেলা। সতীশ । খেলা এইখানেই শেষ– আর দরকার হবে না । শশধর । তোমার এ টাকা তুমি নিয়ে যাও, আমি চাই না । সতীশ । তোমাকে তো দিই নি মেসোমশায় । এ মাসিমার ঋণশোধ। তোমার ঋণ কোনোকালে শোধ করতে পারব না । শশধর । কী সুকু, এ টাকাগুলো— সুকুমারী। গুনে খাতাঞ্চির হাতে দাও-না— ওই থানেই কি ছড়ানো পড়ে থাকবে। শশধর । সতীশ, খেয়ে এসেছ তো ? সতীশ । বাড়ি গিয়ে খাব ৷ শশধর । অ্যা, সে কী কথা । বেলা যে বিস্তর হয়েছে। অাজ এইখানেই খেয়ে যাও । সতীশ । আর খাওয়া নয় মেসোমশায়। এক দফা শোধ করলেম, অন্নঋণ আবার নূতন করে ফাদতে পারব না। প্রস্থান সুকুমারী। বাপের হাত হতে রক্ষা করে এতদিন ওকে খাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করলেম, আজ হাতে দু-পয়সা আসতেই ভাবখানা দেখেছ ! কৃতজ্ঞতা এমনিই বটে ! ঘোর কলি কিনা।