গল্পগুচ্ছ ৩৬১ প্রতি দৃষ্টি রাখা ছাড়া অন্য উপায় নাই। কিন্তু দিনের বেলায় গ্রামে না গেলে তাহার আহার মিলিবে না ; অতএব অন্তত কাল সকালে একবার গ্রামে যাওয়া আবখ্যক । ভোরের দিকে অন্ধকার একটু ফিক হইবামাত্র সে গাছ হইতে নামিয়া পড়িল। যেখানে সন্ন্যাসী ছাইয়ের মধ্যে অঁাক কষিতেছিল সেখানে ভালো করিয়া দেখিল, কিছুই বুঝিল না। চতুর্দিকে ঘুরিয়া দেখিল, অন্ত বনখণ্ডের সঙ্গে কোনো প্রভেদ নাই। বনতলের অন্ধকার ক্রমে যখন ক্ষীণ হইয়া আসিল তখন মৃত্যুঞ্জয় অতি সাবধানে চারি দিক দেখিতে দেখিতে গ্রামের উদ্দেশে চলিল। তাহার ভয় ছিল পাছে সন্ন্যাসী তাহাকে দেখিতে পায় । যে দোকানে মৃত্যুঞ্জয় আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল তাহার নিকটে একটি কায়স্থপৃহিণী ব্ৰত উদযাপন করিয়া সেদিন ব্রাহ্মণভোজন করুইতে প্রবৃত্ত ছিল। সেইখানে আজ মৃত্যুঞ্জয়ের আহার জুটিয়া গেল। কয়দিন আহারের কষ্টের পর আজ তাহার ভোজনটি গুরুতর হইয়া উঠিল। সেই গুরুভোজনের পর যেমন তামাকটি খাইয়া দোকানের মাদুরটিতে একবার গড়াইয়া লইবার ইচ্ছা করিল, অমনি গত রাত্রির অনিদ্রাকাতর মৃত্যুঞ্জয় ঘুমে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িল। মৃত্যুঞ্জয় স্থির করিয়াছিল, আজ সকাল-সকাল আহারাদি করিয়া যথেষ্ট বেল থাকিতে বাহির হইবে। ঠিক তাহার উলটা হইল। যখন তাহার নিদ্রাভঙ্গ হইল তখন স্থৰ্য অস্ত গিয়াছে। তবু মৃত্যুঞ্জয় দমিল না। অন্ধকারেই বনের মধ্যে সে প্রবেশ করিল। "A দেখিতে দেখিতে রাত্রি ঘনীভূত হইয়া আসিল । গাছের ছায়ার মধ্যে দৃষ্টি আর চলে না, জঙ্গলের মধ্যে পথ অবরুদ্ধ হইয়া যায়। মৃত্যুঞ্জয় যে কোন দিকে কোথায় যাইতেছে তাহ কিছুই ঠাহর পাইল না। রাত্রি যখন অবসান হইল তখন দেখিল, সমস্ত রাত্রি সে বনের প্রাস্তে একই জায়গায় ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে। কাকের দল কা কা শব্দে গ্রামের দিকে উড়িল। এই শব্দ মৃত্যুঞ্জয়ের কানে ব্যঙ্গপূর্ণ ধিক্কারবাক্যের মতো শুনাইল । ریا গণনায় বারম্বার ভুল অার সেই ভুল সংশোধন করিতে করিতে অবশেষে সন্ন্যাসী স্বরঙ্গের পথ আবিষ্কার করিয়াছেন। স্বরঙ্গের মধ্যে মশাল লইয়া তিনি প্রবেশ করিলেন। বাধানো ভিত্তির গায়ে স্যাতলা পড়িয়াছে— মাঝে মাঝে এক-এক জায়গায় জল চুইয়া পড়িতেছে। স্থানে স্থানে কতকগুলা ভেক গায়ে গায়ে কৃপাকার