পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 8 e Q রামচরণ মুদি কহিল, “কিন্তু দাদাঠাকুর, কাল যখন রাত দশটার গাড়ি এস্টেশনে পৌছিল তখন একটি স্বন্দর দেখিতে বাৰু আমার দোকানে আসিয়া চৌধুরীদের বাড়ির পথ জিজ্ঞাসা করিল— আমি তাহাকে পথ দেখাইয়া দিলাম। তার হাতে যেন কী একটা দেখিয়াছিলাম।” 'আরে দূর’ বলিয়। এ কথাটাকে বগলাচরণ একেবারেই উড়াইয়া দিল। আশ্বিন ১৩১৮ পণরক্ষা S বংশীবদন তাহার ভাই রসিককে যেমন ভালোবাসিত এমন করিয়া সচরাচর মাও ছেলেকে ভালোবাসিতে পারে না। পাঠশালা হইতে রসিকের আসিতে যদি কিছু বিলম্ব হইত তবে সকল কাজ ফেলিয়া সে তাহার সন্ধানে ছুটিত । তাহাকে ন৷ খাওয়াইয়া সে নিজে থাইতে পারিত না। রসিকের অল্প কিছু অসুখবিসুখ হইলেই বংশীর দুই চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল ঝরিতে থাকিত। রসিক বংশীর চেয়ে ষোলো বছরের ছোটো । মাঝে যে কয়টি ভাইবোন জন্মিয়াছিল সবগুলিই মারা গিয়াছে। কেবল এই সব-শেষেরটিকে রাখিয়া, যখন রসিকের এক বছর বয়স, তখন তাহার মা মারা গেল এবং রসিক যখন তিন বছরের ছেলে তখন সে পিতৃহীন হইল। এখন রসিককে মানুষ করিবার ভার এক। এই বংশীর উপর। র্তাতে কাপড় বোনাই বংশীর পৈতৃক ব্যবসায়। এই ব্যাবসা করিয়াই বংশীর বৃদ্ধ প্রপিতামহ অভিরামু বসাক গ্রামে যে দেবালয় প্রতিষ্ঠা করিয়া গিয়াছে আজও সেখানে রাধানাথের বিগ্রহ স্থাপিত আছে। কিন্তু সমুদ্রপার হইতে এক কল-দৈত্য আসিয়া বেচারা তাতের উপর অগ্নিবাণ হানিল এবং তাতির ঘরে ক্ষুধাস্বরকে বসাইয়া দিয়া বাষ্পষ্ণুংকারে মুহুমুহু জয়শৃঙ্গ বাজাইতে লাগিল। তবু তাতের কঠিন প্রাণ মরিতে চায় না— ঠুক্ঠাক্ ঠুকৃষ্ঠাকৃ করিয়া স্থতা দাতে লইয়া মাকু এখনো চলাচল করিতেছে – কিন্তু তাহার সাবেক চালচলন চঞ্চলা লক্ষ্মীর মনঃপূত হইতেছে না, লোহার দৈত্যটা কলে-বলে-কৌশলে তাহাকে একেবারে বশ করিয়া লইয়াছে। ।