পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రి:Sy রবীন্দ্র-রচনাবলী এক জন কহিল, “পুরুত-ঠাকুর তো স্বয়ং বললেন যে, মা স্বপ্নে বলেছিলেন তিন মাসের মধ্যে এ দেশ মড়কে উচ্ছন্ন যাবে।” হারু বলিল, “এই দেখো না কেন, মোধো আজ দেড় বছর ধরে ব্যামো ভূগে বরাবর বেঁচে এসেছে, যেই বলি বন্ধ হল অমনি সে মারা গেল।” • ক্ষান্ত বলিল, “তা কেন, আমার ভাণ্ডরপো, সে যে মরবে এ কে জানত। তিন দিনের জর । যেমনি কবিরাজের বড়িটি খাওয়া অমনি চোখ উলটে গেল।” ভাগুরপোর শোকে এবং রাজ্যের অমঙ্গল-আশঙ্কায় ক্ষাস্ত কাতর হইয়া পড়িল । তিনকড়ি কহিল, “সেদিন মথুরহাটির গল্পে আগুন লাগল একখানা চালাও বাকি ब्रट्टेल नां * চিন্তামণি চাষা তাহার এক জন সঙ্গী চাষাকে কহিল, “অত কথায় কাজ কী, দেখো না কেন এ বছর যেমন ধান সস্তা হয়েছে এমন অন্ত কোনো বছর হয় নি । এ বছর চাষার কপালে কী আছে কে জানে ৷” বলিদান বন্ধ হইবার পরে এবং পূর্বেও যাহার যাহা কিছু ক্ষতি হইয়াছে, সর্বসম্মতিক্রমে ঐ বলি বন্ধ হওয়াই তাহার একমাত্র কারণ নির্দিষ্ট হইল। এ দেশ পরিত্যাগ করিয়া যাওয়াই ভালো এইরূপ সকলের মত হইল। এ মত কিছুতেই পরিবর্তিত হইল না বটে, কিন্তু দেশেই সকলে বাস করিতে লাগিল । জয়সিংহ অন্তমনস্ক ছিলেন । ইহাদের প্রতি কিছুমাত্র মনোৰোগ না করিয়া তিনি মন্দিরে গিয়া উপস্থিত হইলেন, দেখিলেন, পূজা শেষ করিয়া রঘুপতি মন্দিরের বাহিরে বসিয়া আছেন । so দ্রুতগতি রঘুপতির নিকটে গিয়াই জয়সিংহ কাতর অথচ দৃঢ় স্বরে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গুরুদেব, মায়ের আদেশ গ্রহণ করিবার জন্ত আজ প্রভাতে আমি যখন মাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি কেন তাহার উত্তর দিলেন ।” রঘুপতি একটু ইতস্তত করিয়া বলিলেন, “মা তো আমার দ্বারাই তাহার জাদেশ প্রচার করিয়া থাকেন, তিনি নিজ-মুখে কিছু বলেন না।” জয়সিংহ কছিলেন, “আপনি সম্মুখে উপস্থিত হইয়া বলিলেন না কেন । অন্তরালে লুকায়িত থাকিয়া আমাকে ছলনা করিলেন কেন ।” o রঘুপতি ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, "চুপ করে। আমি কী ভাবিয়া কী করি তুমি তাহার কী যুৰিবে। বাচালের মতে ঘাহা মুখে আসে তাহাই বলিয়ে না। আমি যাহা আদেশ করিব তুমি কেবল তাহাই পালন করিৰে, কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়ে না।”