পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88r রবীন্দ্র-রচনাবলী আপনারও আছে, এবং আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ, আমারও আছে। আপনার সময়মতো আপনি বিচার করিতে বসিলে আমার সময় থাকে কোথা ।” স্বজা হাল ছাড়িয়া দিয়া বলিলেন, “ভারি হাঙ্গাম। এত কথা শোনার চেয়ে তোমার নালিশ শোনা ভালো । বলিয়া যাও।” * রঘুপতি কহিলেন, “ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্য র্তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা নক্ষত্র রায়কে বিনা অপরাধে নির্বাসিত করিয়াছেন—* স্বজা বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “ব্রাহ্মণ, তুমি পরের নালিশ লইয়া কেন আমার সময় নষ্ট করিতেছ। এখন এ সমস্ত বিচার করিবার সময় নয় ।” রঘুপতি কহিলেন, “ফরিয়াদি রাজধানীতে হাজির আছেন।” স্বজা কহিলেন, “তিনি আপনি উপস্থিত থাকিয়া আপনার মুখে যখন নালিশ উত্থাপন করিবেন তখন বিবেচনা করা যাইবে ।” রঘুপতি কহিলেন, “র্তাহাকে কবে এখানে হাজির করিব।” সুজা কহিলেন, “ব্রাহ্মণ কিছুতেই ছাড়ে না । আচ্ছ এক সপ্তাহ পরে আনিয়ো ।” রঘুপতি কহিলেন, “বাদশাহ যদি হুকুম করেন তো আমি তাহাকে কাল আনিব ।” স্বজা বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “আচ্ছা কালই আনিয়ো।” আজিকার মতো নিষ্কৃতি পাইলেন। রঘুপতি বিদায় হইলেন । নক্ষত্র রায় কহিলেন, “নবাবের কাছে যাইব কিন্তু নজরের জন্য কী লইব ।” রঘুপতি কহিলেন, “সেজন্ত তোমাকে ভাবিতে হইবে না। নজরের জন্ত তিনি দেড় লক্ষ মুদ্রা উপস্থিত করিলেন । পরদিন প্রভাতে রঘুপতি কম্পিতহদয়ে নক্ষত্র রায়কে লইয়া স্বজার সভায় উপস্থিত হইলেন । যখন দেড় লক্ষ টাকা নবাবের পদতলে স্থাপিত হইল তখন তাহার মুখঐ তেমন অপ্রসন্ন বোধ হইল না । নক্ষত্র রায়ের নালিশ অতি সহজেই তাহার হৃদয়ংগম হইল। তিনি কহিলেন, “এক্ষণে তোমাদের কী অভিপ্রায় আমাকে ৰলো।” রঘুপতি কহিলেন, “গোবিন্দমাণিক্যকে নির্বাসিত করিয়া তাহার স্থলে নক্ষত্র রায়কে রাজা করিয়া দিতে আজ্ঞা হউক ।” যদিও স্বজা নিজে ভ্রাতার সিংহাসনে হস্তক্ষেপ করিতে কিছুমাত্র সংকুচিত হন না, তথাপি এ-স্থলে তাহার মনে কেমন আপত্তি উপস্থিত হইল। কিন্তু রঘুপতির প্রার্থনা পূরণ করাই তাহার আপাতত সকলের চেয়ে সহজ বোধ হইল-নছিলে রঘুপতি বিস্তর বকবিকি করিবে এই তাহার ভয় । বিশেষত দেড় লক্ষ টাকা নজরের উপরেও অধিক আপত্তি করা ভালো দেখায় না এইরূপ র্তাহার মনে হইল। তিনি বলিলেন,