পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোনার তরী যেতে যেতে গৃহমুখে বালক-পথিক । উচ্ছসিত কণ্ঠস্বর নিশ্চিন্ত নিভীক কঁাপিছে সপ্তম সুরে, তীব্ৰ উচ্চতান সন্ধ্যারে কাটিয়া যেন করিবে দুখান। দেখিতে না পাই তারে। ওই যে সম্মুখে প্রাস্তরের সর্বপ্রান্তে, দক্ষিণের মুখে, আখের খেতের পারে, কদলী সুপারি নিবিড় বাশের বন, মাঝখানে তারি বিশ্রাম করিছে গ্রাম, হেথা আঁখি ধায় । হােথা কোন গৃহপানে গেয়ে চলে যায় কোন রাখালের ছেলে, নাহি ভাবে কিছু, নাহি চায় শূন্যপানে, নাহি আগুপিছু ! দেখে শুনে মনে পড়ে সেই সন্ধ্যাবেলা শৈশবের । ক’ত গল্প, কত বাল্য খেলা, এক বিছানায় শুয়ে মোরা সঙ্গী তিন ; সে কি আজিকার কথা, হল কত দিন । এখনো কি বৃদ্ধ হয়ে যায় নি। সংসার । ভোলে নাই খেলাধুলা, নয়নে তাহার বাল্যের খেলানাগুলি করিয়া বদল পায় নি। কঠিন জ্ঞান ? দাড়ায়ে হেথায় শুনিয়া কাহার গান পন্ডি গেল মনে— কত শত নদীতীরে, কত আশ্রবনে, কাংস্যঘণ্টা-মুখরিত মন্দিরের ধারে, কত শস্যক্ষেত্রপ্রান্তে, পুকুরের পাড়ে গৃহে গৃহে জাগিতেছে নব হাসিমুখ, নবীন হৃদয়ভরা নব নব সুখ, কত অসম্ভব কথা, অপূর্ব কল্পনা, অনন্ত বিশ্বাস । দাড়াইয়া অন্ধকারে দেখিানু নক্ষত্ৰলোকে, অসীম সংসারে সন্ধ্যাশয্যা, মার মুখ, দীপের আলোক । শিলাইদহ ফালুন ১২৯৮