পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ ( ( 이 আমি সাধারণত স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে বলছিলুম— ” নির্মলা। আমি স্ত্রীজাতি-পুরুষজাতির প্রভেদ নিয়ে কোনো বিচার করতে চাই নে— আমি নিজের অন্তঃকরণ জানি এবং র্যার উন্নত দৃষ্টান্তকে আশ্রয় করে রয়েছি তার অন্তঃকরণ জানি, কাজে প্ৰবৃত্ত হতে এর বেশি আমার আর-কিছু জানিবার দরকার নেই। চন্দ্ৰবাবু নিজের দক্ষিণ করতল চোখের অত্যন্ত কাছে লইয়া নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলেন। পূৰ্ণ খুব চমৎকার করিয়া একটা কিছু বলিবার ইচ্ছা করিল, কিন্তু তাহার মুখ দিয়া কোনো কথাই বাহির হইল না। নির্মলা দ্বারের অন্তরালে থাকিলে পূর্ণর বাকশক্তি যেরূপ সতেজ থাকে আজ তাহার তেমন পরিচয় পাওয়া গেল না। তবু সে মনে মনে অনেক আবৃত্তি করিয়া বলিল, “ দেবী, এই পঙ্কিল পৃথিবীর কাজে কেন আপনার পবিত্র দুইখানি হস্ত প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন ?” কথাটা মনে যেমন লাগিতেছিল মুখে তেমন শোনাইল না— পূর্ণ বলিয়াই বুঝিতে পারিল কথাটা গদ্যের মধ্যে হঠাৎ দ্যর মতো কিছু যেন বাড়াবাড়ি হইয়া পড়িল। লাজায় তাহার কান লাল হইয়া উঠিল। বিপিন স্বাভাবিক সুগভীর শান্তস্বরে কহিল, “পৃথিবী যত বেশি পঙ্কিল পৃথিবীর সংশোধন-কাৰ্য তত বেশি পবিত্ৰ ।” এই কথাটায় কৃতজ্ঞ নির্মলার মুখের ভাব লক্ষ্য করিয়া পূৰ্ণ ভাবিল, “আহা, কথাটা আমারই বলা শ্ৰীশ। সভার অধিবেশনে স্ত্রীসভ্য লওয়া সম্বন্ধে নিয়মমত প্ৰস্তাব উত্থাপন করে যা স্থির হয় আপনাকে জনাব । নির্মলা এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করিয়া পালের নীেকার মতো নিঃশব্দে চলিয়া যাইবার উপক্রম করিল। হঠাৎ অধ্যাপক সচেতন হইয়া ডাকিলেন, “ ফেনি, আমার সেই গলার বোতামটা ?” চন্দ্ৰবাবু গলায় হাত দিয়া “হা হা আছে বটে” বলিয়া তিন ছাত্রের দিকে চাহিয়া হাসিলেন। নৃপকলা। আজকাল তুই মাঝে মাঝে কেন আমন গম্ভীর হচ্ছিস বল তো নীরু। নীরবালা। আমাদের বাড়ির যত কিছু গাম্ভীৰ্য সব বুঝি তোর একলার ? আমার খুশি আমি গম্ভীর হব | নৃপবালা। তুই কী ভাবছিস আমি বেশ জানি। নীরবালা । তোর অন্ত আন্দাজ করবার দরকার কী ভাই ? এখন তোর নিজের ভাবনা ভাববার সময় হয়েছে । নুপ নীরুর গলা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “তুই ভাবছিস, মা গো মা, আমরা কী জঞ্জাল। আমাদের বিদায় করে দিতেও এত ভাবনা, এত ঝঞাটি ।” নীরবালা । তা, আমরা তো ভাই ফেলে দেবার জিনিস নয় যে আমনি ছেড়ে দিলেই হল । আমাদের জন্যে যে এতটা হাঙ্গাম হচ্ছে সে তো গৌরবের কথা। কুমারসম্ভবে তো পড়েছিস গৌরীর বিয়ের জন্য একটি আস্ত দেবতা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। যদি কোনো কবির কানে ওঠে তা হলে আমাদের বিবাহেরও একটা বৰ্ণনা বেরিয়ে যাবে। নৃপবালা। না ভাই, আমার ভারি লজ্জা করছে। নীরবালা। আর, আমার বুঝি লজ্জা করছে না ? আমি বুঝি। বেহায়া ? কিন্তু কী করবি বল ? ইস্কুলে জেগে পড়া মুখস্থ করেছিলেম। লজাও করে প্রাইজও ছাড়ি নে, আমার এই স্বভাব।