পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

వ\లిన রবীন্দ্র-রচনাবলী এ দিকে রূপ ছাড়া আরও একটা কারণে হঠাৎ কুমুদিনীর দর বেড়ে গিয়েছে। মুরনগরে থাকতেই ঠিক বিবাহের দিনে মধুসূদন টেলিগ্রাফ পেয়েছে যে, এবার তিসি চালানের কাজে লাভ হয়েছে প্রায় বিশ লাখ টাকা। সন্দেহ রইল না, এটা নতুন বধুর পয়ে। স্ত্রীভাগ্যে ধন, তার প্রমাণ হাতে হাতে। তাই কুমুকে পাশে নিয়ে গাড়িতে বসে ভিতরে ভিতরে এই পরম পরিতৃপ্তি তার ছিল যে, ভাবী মুনফার একটা জীবন্ত বিধিদত্ত দলিল নিয়ে বাড়ি চলেছে। এ নইলে আজকের এই ব্রুহামরথযাত্রার পালাটায় অপঘাত ঘটতে পারত। ミ> রাজা উপাধি পাওয়ার পর থেকে কলকাতায় ঘোষালবাড়ির দ্বারে নাম খোদ হয়েছে ‘মধুপ্রাসাদ । সেই প্রাসাদের লোহার গেটের এক পাশে আজ নহবত বসেছে, আর বাগানে একটা তাৰুতে বাজছে ব্যাণ্ড । গেটের মাথায় অর্ধচন্দ্রাকারে গ্যাসের টাইপে লেখা “প্রজাপতয়ে নমঃ”। সন্ধ্যাবেলায় আলোকশিখায় এই লিখনটি সমুজ্জল হবে। গেট থেকে কাকর-দেওয়া যে পথ বাড়ি পর্যন্ত গেছে তার দুই ধারে দেবদারুপাত ও গাদার মালায় শোভাসজ্জা ; বাড়ির প্রথম তলার উচু মেজেতে ওঠবার সিড়ির ধাপে লাল সালু পাতা। আত্মীয়বন্ধুর জনতার ভিতর দিয়ে বরকনের গাড়ি গাড়িবারান্দায় এসে থামল। শাখ উলুধ্বনি ঢাক ঢোল কাসর নহবত ব্যাও সব একসঙ্গে উঠল বেজে— যেন দশ-পনেরোটা আওয়াজের মালগাড়ির এক জায়গাতে পুরো বেগে ঠোকাঠুকি ঘটল। মধুসূদনের কোন-এক সম্পর্কের দিদিমা, পরিপক্ক বুড়ি, সিথিতে যত মোট ফণক তত মোটা সি দুর, চওড়া-লাল-পেড়ে শাড়ি, মোটা হাতে মোট মোট সোনার বালা এবং শাখার চুড়ি, একটা রুপোর ঘটিতে জল নিয়ে বউয়ের পায়ে ছিটিয়ে দিয়ে আঁচলে মুছে নিলেন, হাতে নোয় পরিয়ে দিলেন, বউয়ের মুখে একটু মধু দিয়ে বললেন, “আহ, এতদিন পরে আমাদের নীল গগনে উঠল পূর্ণচাদ, নীল সরোবরে ফুটল সোনার পদ্ম।” বরকনে গাড়ি থেকে নাবল। যুবক-অভ্যাগতদের দৃষ্টি ঈর্ষান্বিত। একজন বললে, “দৈত্য স্বৰ্গ লুঠ করে এনেছে রে, অন্সরী সোনার শিকলে বাধা ।” আর-একজন বললে, “সাবেক কালে এমন মেয়ের জন্যে রাজায় রাজায় লড়াই বেধে যেত, আজ তিসিচালানির টাকাতেই কাজ সিদ্ধি। কলিযুগে দেবতাগুলো বেরসিক। ভাগ্যচক্রের সব গ্রহনক্ষত্রই বৈশুবর্ণ।”