পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ২৬৫ বিদায় করে দেবে, তাই বলে কেউ নিজের ইচ্ছায় বিদায় হতে চাইবে এটা সম্পূর্ণ বেদপ্তর। বিরক্তির স্বরে বললে, “কেন, যাবার জন্যে তার এত তাড়া কিসের ?” নবীন বললে, “বাড়ির গিন্নি এ বাড়িতে এসেছেন, এখন এ বাড়ির সমস্ত ভার তে৷ তাকেই নিতে হবে। মেজেবিউ বললে, আমি মাঝে থাকলে কী জানি কখন কী কথা ওঠে।” মধুসূদন বললে, “এ-সব কথার বিচারভার কি তারই উপরে ?” নবীন ভালোমানুষের মতো বললে, “কী করব বলে, মেয়েমানুষের জেদ। কী জানি, তার মনে হয়েছে, কোন কথা নিয়ে তুমি হয়তো একদিন হঠাৎ তাকে সরিয়ে দেবে, সে অপমান তার সইবে না— তাই সে একেবারে পণ করে বসেছে সে যাবেই। আসছে ত্রয়োদশী তিথিতে দিন পড়েছে— এর মধ্যে কাজকর্ম সব গুছিয়ে দিয়ে হিসাবপত্র চুকিয়ে সে চলে যেতে চায়।” 婚 , মধুস্থদন বললে, “দেখো নবীন, মেজেবিউকে আদর দিয়ে তুমিই বিগড়ে দিয়েছ। তাকে একটু কড়া করেই বোলো, সে কিছুতেই যেতে পারবে না। তুমি পুরুষমানুষ, ঘরে তোমার নিজের শাসন চলবে না, এ আমি দেখতে পারি নে।” নবীন মাথা চুলকিয়ে বললে, “চেষ্টা করে দেখব দাদা, কিন্তু—” “আচ্ছা, আমার নাম করে বোলে, এখন তার যাওয়া চলবে না। যখন সময় বুঝব তখন যাবার দিন আমিই ঠিক করে দেব।” নবীন বললে, “তুমি বললে কিনা মেজেবিউকে দেশে পাঠাতে হবে তাই ভাবছি—” মধুসুদন উত্তেজিত হয়ে বললে, “আমি কি বলেছি, এই মুহূর্তেই পাঠিয়ে দিতে হবে ?” 龜 নবীন ধীরে ধীরে চলে গেল। মধুসূদন একটা গ্যাসের শিখা জালিয়ে দিয়ে লম্বা কেদারায় ঠেসান দিয়ে বসে রইল। বাড়ির চৌকিদার রাত্রে এক-একবার বাড়ির ঘরগুলোর সামনে দিয়ে টহলিয়ে আসে। মধুসূদনের অল্প একটু তন্দ্রার মতে এসেছিল, এমন সময় হঠাৎ চমকিয়ে উঠে দেখে চৌকিদার ঘরে ঢুকে লণ্ঠন তুলে ধরে তার মুখের দিকে চেয়ে আছে। হয়তো সে ভাবছিল, মহারাজ মূৰ্ছাই গেছে, না মারাই গেছে। মধুসূদন লজ্জিত হয়ে ধড়ফড় করে চৌকি থেকে উঠে পড়ল। বাইরের আপিসঘরে বসে সন্তোবিবাহিত রাজাবাহাদুরের রাত্রিযাপনের শোকাবহ দৃশুটা চৌকিদারের কাছে যে অসন্মানকর এ কথাটা মুহূর্তেই তাকে যেন মারলে। উঠেই কিছু রাগের স্বরে চৌকিদারকে বললে, “ঘর বন্ধ করে।” যেন ঘর বন্ধ ন