পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ S)o(? পর্যায়ের লাইন থেকে আর-এক পর্যায়ের লাইনে চালান করে দিচ্ছে বা । প্রথম কাকানিতেই বুকটা ধড়াস করে উঠল। মীটিং থেকে ফিরে এসে আপিসঘরে কেদারা হেলান দিয়ে গুড়গুড়ির ধূমকুণ্ডলের সঙ্গে নিজের কালে রঙের চিন্তাকে কুগুলায়িত করতে লাগল। নবীন এসে খবর দিলে বিপ্রদাসের বাড়ি থেকে লোক এসেছে দেখা করতে । মধুসূদন কেঁকে উঠে বললে, “যেতে বলে দাও, আমার এখন সময় নেই।” নবীন মধুসূদনের ভাবগতিক দেখে বুঝলে মাটিঙে একটা অপঘাত ঘটেছে। বুঝলে দাদার মন এখন দুর্বল। দৌর্বল্য স্বভাবত অনুদার, দুর্বলের আত্মগরিম ক্ষমাহীন নিষ্ঠুরতার রূপ ধরে। দাদার আহত মন বউরানীকে কঠিনভাবে আঘাত করতে চাইবে এতে নবীনের সন্দেহমাত্র ছিল না। এ আঘাত যে করেই হোক ঠেকাতেই হবে। এর পূর্ব পর্যন্ত ওর মনে দ্বিধা ছিল, সে দ্বিধা সম্পূর্ণ গেল কেটে। কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আবার ঘরে এসে দেখলে ওর দাদা ঠিকানাওআলা নামের ফর্দর খাতা নিয়ে পাতা ওলটাচ্ছে। নবীন এসে দাড়াতেই মধুসূদন মুখ তুলে রুক্ষস্বরে জিজ্ঞাসা করলে, “আবার কিসের দরকার ? তোমাদের বিপ্রদাসবাবুর মোক্তারি করতে এসেছ বুঝি ?” নবীন বললে, “না দাদা, সে ভয় নেই। ওদের লোকটা এমন তাড়া খেয়ে গেছে যে তুমি নিজেও যদি ডেকে পাঠাও তবু সে এ-বাড়িমুখে হবে না।” এ কথাটাও মধুসূদনের সহ হল না। বলে উঠল, “কড়ে আঙলট নাড়লেই পায়ের কাছে এসে পড়তে হবে। লোকটা এসেছিল কী করতে ?” “তোমাকে খবর দিতে যে বিপ্রদাসবাবুর কলকাতা আসা দুদিন পিছিয়ে গেল। শরীর আর-একটু সেরে তবে আসবেন।” =چ---- “আচ্ছ। আচ্ছা, সেজন্যে আমার তাড়া নেই।” নবীন বললে, "দাদা, কাল সকালে ঘণ্টা দুয়ের জন্যে ছুটি চাই।” "কেন ?" | “শুনলে তুমি রাগ করবে।” *না শুনলে আরও রাগ করব।” “কুম্ভকোনাম থেকে এক জ্যোতিষী এসেছেন তাকে দিয়ে একবার ভাগ্যপরীক্ষা করাতে চাই ।” মধুসূদনের বুকটা ধড়াস করে উঠল, ইচ্ছে করল এখনই ছুটে তার কাছে যায়। মুখে তর্জন করে বললে, “তুমি বিশ্বাস কর ?”