পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী এমন বিষম জেদ যে, সেদিন আমাকে কিছুতেই কেউ ঠেকাতে পারত না । দাদা তা নিশ্চিত জানতেন বলেই বৃথা বাধা দিলেন না ; কিন্তু কত ভয় পেয়েছেন, কত উদ্বিগ্ন হয়েছেন, তা কি আমি বুঝতে পারি নি ? বুঝতে পেরেও নিজের ঝোকটাকে একটুও সামলাই নি, এতবড়ে অবুঝ আমি। আজ থেকে চিরদিন আমি কেবলই কষ্ট পাব, কষ্ট দেব, আর প্রতিদিন মনে জানব এ সমস্তই আমার নিজের স্বষ্টি।” মোতির মা কী যে বলবে কিছুই ভেবে পেলে না। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞাসা করলে, “আচ্ছ দিদি, তুমি যে বিয়ে করতে মন স্থির করলে, কী ভেবে ?” “তখন নিশ্চিত জানতুম, স্বামী ভালোমন্দ যাই হোক না কেন, স্ত্রীর সতীত্বগৌরব প্রমাণের একটা উপলক্ষমাত্র। মনে একটুও সন্দেহ ছিল না যে, প্রজাপতি যাকেই স্বামী বলে ঠিক করে দিয়েছেন তাকেই ভালোবাসবই। ছেলেবেলা থেকে কেবল মাকে দেখেছি, পুরাণ পড়েছি, কথকতা শুনেছি, মনে হয়েছে শাস্ত্রের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে চলা খুব সহজ ।” “দিদি, উনিশ বছরের কুমারীর জন্যে শাস্ত্র লেখা হয় নি।” “আজ বুঝতে পেরেছি সংসারে ভালোবাসাটা উপরি-পাওনা। ওটাকে বাদ দিয়েই ধর্মকে অঁাকড়ে ধরে সংসারসমুদ্রে ভাসতে হবে। ধর্ম যদি সরস হয়ে ফুল না দেয়, ফল না দেয়, অন্তত শুকনো হয়ে যেন ভাসিয়ে রাখে।” মোতির মা নিজে বিশেষ কিছু না বলে কুমুকে দিয়ে কথা বলিয়ে নিতে লাগল। 86. মধুসুদন আপিসে গিয়েই দেখলে খবর ভালে নয়। মাদ্রাজের এক বড়ে ব্যাঙ্ক ফেল করেছে, তাদের সঙ্গে এদের কারবার। তার পরে কানে এল যে, কোনো ডাইরেক্টরের তরফ থেকে কোনো কর্মচারী মধুসূদনের অজানিতে খাতাপত্র ঘাটাঘাটি করছে। এতদিন কেউ মধুসুদনকে সন্দেহ করতে সাহস করে নি, একজন যেই ধরিয়ে দিয়েছে আমনি যেন একটা মন্ত্রশক্তি ছুটে গেল। বড়ো কাজের ছোটো ক্রটি ধরা সহজ, যারা মাতব্বর সেনাপতি তারা কত খুচরো হারের ভিতর দিয়ে মোটের উপর মস্ত করেই জেতে। মধুসুদন বরাবর তেমনি জিতেই এসেছে— তাই বেছে বেছে খুচরো হার কারও নজরেই পড়ে নি। কিন্তু বেছে বেছে তারই একটা ফৰ্দ বানিয়ে সেটা সাধারণ লোকের নজরে তুললে তারা নিজের বুদ্ধির তারিফ করে, বলে আমরা হলে এ ভুল করতুম না। কে