পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭০ রবীন্দ্র-রচনাবলী দিতে হবে। কিন্তু গণেশরাম দামে আমাকে ঠকাচ্ছে বলে বোধ হচ্ছে । তোমাকে দিয়ে সেটা একবার দেখিয়ে নিতে চাই । আমার যতটা আন্দাজ তাতে মনে হয় না তে তেরো টাকা তার দাম হতে পারে। খুব বেশি হয় তো ন-টাকা সাড়ে ন-টাকার মধ্যেই হওয়া উচিত।” { মোতির মা অবাক হয়ে বললে, “ও আবার তোমার মাথায় কোথা থেকে এল ? আমার ছোটো ভাজের সাধ হবার কোনো উপায়ই নেই। তার কোলের ছেলেটির বয়স তো সবে দেড় মাস। বানিয়ে বলতে তোমার আজকাল দেখছি কিছুই বাধে না । এই তোমার নতুন বিদ্যে পেলে কোথায় ?” 劃 “যেখান থেকে কালিদাস র্তার কবিত্ব পেয়েছেন, বাণী বীণাপাণির কাছ থেকে ।” “বীণাপাণি তোমাকে যতক্ষণ না ছাড়েন ততক্ষণ তোমাকে নিয়ে ঘর করা যে দায় হবে।” “পণ করেছি, স্বর্গারোহণকালে নরকদর্শন করে যাব, বউরানীর চরণে এই অামার, দান ।” “কিন্তু সাড়ে ন-টাকা দামের ঢাকাই কাপড় তখনই-তখনই তোমার জুটল কোথায় ?” “কোথাও না। কুড়ি মিনিট পরে ফিরে এসে বললুম, গণেশরাম সে কাপড় আমাকে না বলেই ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। দাদার মুখ দেখে বুঝলুম, ইতিমধ্যে ছবিটা তার মগজের মধ্যে ঢুকে স্বপ্নের রূপ ধরেছে। কী জানি কেন, পৃথিবীতে আমারই কাছে দাদার একটু আছে চক্ষুলজ্জা, আর কারও হলে ছবিটা ধ। করে তুলে নিতে র্তার বাধত না।” “তুমিও তো লোভী কম নও। দাদাকে না হয় সেটা দিতেই।” “তা দিয়েছি, কিন্তু সহজ মনে দিই নি। বললেম, দাদা, এই ছবিটা থেকে একটা অয়েলপেটিং করিয়ে নিয়ে তোমার শোবার ঘরে রেখে দিলে হয় না ? দাদা যেন উদাসীনভাবে বললে, আচ্ছা দেখা যাবে। বলেই ছবিটা নিয়ে উপরের ঘরে চলে গেল । তার পরে কী হল ঠিক জানি নে। বোধ করি আপিসে যাওয়া হয় নি, আর ওই ছবিটাও ফিরে পাবার আশা রাখি নে ৷” “তোমার বউরানীর জন্তে স্বর্গটাই খোওয়াতে যখন রাজি আছ, তখন না হয় একখান। ছবিই বা খোওয়ালে।” “স্বর্গট সম্বন্ধে সন্দেহ আছে, ছবিটা সম্বন্ধে একটুও সন্দেহ ছিল না। এমন ছবি দৈবাৎ হয়। ষে দুর্লভ লগ্নে ওঁর মুখটিতে লক্ষ্মীর প্রসাদ সম্পূর্ণ নেমেছিল ঠিক সেই