পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 8) বড়োই কঠিন হইত। যে বলিত ‘আমি বুঝিলাম না আমাকে বুঝাইয়া দাও, তাহার নিকট হার মানিতে হইত। কবি যাহা দিতেছেন তাহাই গ্রহণ করিবার জন্য পাঠককে প্রস্তুত হওয়া উচিত ; পাঠক যাহা চান তাহাই কাব্য হইতে আদায় করিবার চেষ্টা করিতে গেলে অধিকাংশ সময়ে নিরাশ হইতে হয়। তাহার ফল হয়, যাহা চাই তাহ পাই না এবং কবি যাহা দিতেছেন তাহা হইতেও বঞ্চিত হইতে হয়। সারদামঙ্গলে’ কবি যাহা গাহিতেছেন তাহা কান পাতিয়া শুনিলে একটি স্বগীয় সংগীতসুধায় হৃদয় অভিষিক্ত হইয়া উঠে, কিন্তু সমালোচন-শাস্ত্রের আইনের মধ্য হইতে তাহাকে ছাকিয়া লইবার চেষ্টা করিলে তাহার অনেক রস বৃথা নষ্ট হইয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে ‘সারদামঙ্গল’ একটি সমগ্র কাব্য নহে, তাহাকে কতকগুলি খণ্ড কবিতার সমষ্টিরূপে দেখিলে তাহার অর্থবোধ হইতে কষ্ট হয় না। দ্বিতীয়ত, সরস্বতী সম্বন্ধে সাধারণত পাঠকের মনে যেরূপ ধারণ আছে কবির সরস্বতী তাহা হইতে স্বতন্ত্র। কবি যে-সরস্বতীর বন্দনা করিতেছেন তিনি নানা আকারে নানা ভাবে নান৷ লোকের নিকট উদিত হন। তিনি কখনও জননী, কখনও প্রেয়সী, কখনও কন্যা। তিনি সৌন্দর্যরূপে জগতের অভ্যন্তরে বিরাজ করিতেছেন এবং দয়া-স্নেহ-প্রেমে মানবের চিত্তকে অহরহ বিচলিত করিতেছেন। ইংরেজ কবি শেলি যে বিশ্বব্যাপিনী সৌন্দর্যলক্ষ্মীকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন— wo Spirit of Beauty, that dost consecrate With thine own hues all thou dost shine upon Of human thought or form. যাহাকে বলিয়াছেন— . Thou messenger of sympathies, That wax and wane in lovers' eyes. সেই দেবীই বিহারীলালের সরস্বতী । সারদামঙ্গলের আরম্ভের চারি শ্লোকে কবি সেই সারদা দেবীকে মূর্তিমতী করিয়া বন্দনা করিয়াছেন। তৎপরে, বাল্মীকির তপোবনে সেই করুণারূপিণী দেবীর কিরূপে আবির্ভাব হইল, কবি তাহ বর্ণনা করিতেছেন। পাঠকের নেত্রসম্মুখে দৃশ্যপট যখন উঠিল তখন তপোবনে অন্ধকার রাত্রি। নাহি চন্দ্র সুর্য তার অনল-হিল্লোল-ধারা