পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

osebe W R কাশীর বাড়িওয়ালা বৈদ্যনাথের খুড়শ্বশুরের মক্কেল। বােধ করি সেই কারণেই বাড়ি খুব চড়া দামেই বিক্রয় হইল। বৈদ্যনাথ একাকী বাড়ি দখল করিয়া বসিলেন। একেবারে নদীর উপরেই বাড়ি। ভিত্তি ধৌত করিয়া নদীস্রোত প্রবাহিত হইতেছে। দুৰ্বোঞ্চ গ’হজনীতি সন্সি স্কুল হে শিল্পে কৰে আঁশখালীয় সংস্কৃতি দিয়া भश 6 ।। কিন্তু কিছুতেই নিদ্রা হয় না। গভীর রাত্রে যখন সমস্ত কোলাহল থামিয়া গেল, তখন কোথা হইতে একটা ঝন ঝন শব্দ শুনিয়া বৈদ্যনাথ চমকিয়া উঠিলেন। শব্দ মৃদু। কিন্তু পরিষ্কার। যেন পাতালে বলিরাজের ভাণ্ডারে কোষাধ্যক্ষ বসিয়া বসিয়া টাকা গণনা করিতেছে। : বৈদ্যনাথের মনে ভয় হইল, কৌতুহল হইল এবং সেইসঙ্গে দুৰ্জয় আশার সঞ্চার হইল। কম্পিতহস্তে প্ৰদীপ লইয়া ঘরে ঘরে ফিরিলেন । এঘরে গেলে মনে হয় শব্দ ওঘর হইতে আসিতেছে- ওঘরে গেলে মনে হয় এঘর হইতে আসিতেছে। বৈদ্যনাথ সমস্ত রাত্রি কেবলই এঘর ওঘর করিলেন। দিনের বেলা সেই পাতালভেদী শব্দ অন্যান্য শব্দের সহিত মিশিয়া গেল, আর তাহাকে চিনা গেল না । রাত্রি দুই-তিন প্রহরের সময় যখন জগৎ নিদ্রিত হইল তখন আবার সেই শব্দ জাগিয়া উঠিল। বৈদ্যনাথের চিত্র নিতান্ত অস্থির হইল। শব্দ লক্ষ্য করিয়া কোন দিকে যাইবেন, ভাবিয়া পাইলেন না। মরুভূমির মধ্যে জলের কল্লোল শোনা যাইতেছে, অথচ কোন দিক হইতে আসিতেছে নির্ণয় হইতেছে না ; ভয় হইতেছে পাছে একবার ভুল পথ অবলম্বন করিলে গুপ্ত নিঝরিণী একেবারে আয়ত্তের অতীত হইয়া যায়। তৃষিত পথিক স্তব্ধভাবে দাড়াইয়া প্ৰাণপণে কান খাড়া করিয়া থাকে, এদিকে তৃষ্ণা উত্তরোত্তর প্রবল श्शा ठा- तननाथद्ध (नई अवश श्ल। বহুদিন অনিশ্চিত অবস্থাতেই কাটিয়া গেল। কেবল অনিদ্রা এবং বৃথা আশ্বাসে তাহার সম্ভোষগ্নিগ্ধ মুখে ব্যগ্রতার তীব্রভাব রেখান্বিত হইয়া উঠিল। কোটরনিবিষ্ট চকিতনেত্ৰে মধ্যাহের মরুবালুকার মতো একটা জ্বালা প্ৰকাশ পাইল । অবশেষে একদিন দ্বিপ্রহরে সমস্ত দ্বার রুদ্ধ করিয়া ঘরের মেঝেময় শাবল?কিয়া শব্দ করিতে লাগিলেন। একটি পার্শ্ববর্তী ছোটাে কুঠরির মেঝের মধ্য হইতে ফাপা আওয়াজ দিল। রাত্রি নিযুপ্ত হইলে পর বৈদ্যনাথ একাকী বসিয়া সেই মেঝে খনন করিতে লাগিলেন। যখন রাত্রি প্রভাতপ্রায়, তখন ছিদ্ৰখনন সম্পূর্ণ হইল। বৈদ্যনাথ দেখিলেন নীচে একটা ঘরের মতো আছে- কিন্তু সেই রাত্রের অন্ধকারে তাহার মধ্যে নির্বিচারে পা নামাইয়া দিতে সাহস করিলেন না। গর্তের উপর বিছানা চাপা দিয়া শয়ন করিলেন। কিন্তু শব্দ এমনি পরিস্ফুট হইয়া উঠিল যে ভয়ে সেখান হইতে উঠিয়া আসিলেন- অথচ গৃহ অরক্ষিত রাখিয়া দ্বার ছাড়িয়া । দূরে যাইতেও প্রবৃত্তি হইল না। লোভ এবং ভয় দুই দিক হইতে দুই হাত ধরিয়া টানিতে লাগিল। রাত কাটিয়া গেল । , আজ দিনের বেলাও শব্দ শুনা যায়। ভৃত্যকে ঘরের মধ্যে ঢুকিতে না দিয়া বাহিরে আহারাদি করিলেন। আহারান্তে ঘরে ঢুকিয়া দ্বারে চাবি লােগাইয়া দিলেন। দুৰ্গনাম উচ্চারণ করিয়া গহবরমুখ হইতে বিছানা সরাইয়া ফেলিলেন। জলের ছলছল এবং ধাতুদ্রব্যের ঠঠং খুব পরিষ্কার শুনা গেল। 钴 ভয়ে ভয়ে গর্তের কাছে আস্তে আস্তে মুখ লইয়া গিয়া দেখিলেন, অনতিউচ্চ কক্ষের মধ্যে জলের স্রোত প্রবাহিত হইতেছে- অন্ধকারে আর বিশেষ কিছু দেখিতে পাইলেন না। একটা বড়ো লাঠি নামাইয়া দেখিলেন জল একইটুর অধিক নহে। একটি দিয়াশলাই ও বাতি লইয়া সেই অগভীর গৃহের মধ্যে অনায়াসে লাফাইয়া পড়লেন। পাছে এক মুহূর্তে সমস্ত আশা নিবিয়া যায় এইজন্য বাতি জ্বালাইতে হাত কঁাপিতে লাগিল। অনেকগুলি দেশলাই নষ্ট করিয়া অবশেষে বাতি জ্বলিল । দেখিলেন, একটি মোটা লোহার শিকলিতে একটি বৃহৎ ঠোবার কলসি বাধা রহিয়াছে, এক-একবার । জলের স্রোত প্রবল হয় এবং শিকলি কলসির উপর পড়িয়া শব্দ করিতে থাকে ।