পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓw9$ রবীন্দ্র-রচনাবলী টাউন-হলে এই সভা হইতে দিবেন না ; কেবল মান্দ্ৰাজ গবর্নমেন্ট একটি কাজের প্রতিবাদ করিবার জন্য গবর্নমেন্ট সভা হইতে দিতে পারেন না ; অন্য প্রদেশে যাহা হইতেছে, তাহার প্রতিবাদ বা আলোচনা বাংলা গবর্নমেন্ট বঙ্গে হইতে দিতে পারেন না,** কেহ সভা করিয়া প্রতিবাদদি করিলে গবর্নমেন্ট তাঁহাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করবেন।“ এইরূপ অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ কর্তার ইচ্ছায় কর্ম প্ৰবন্ধ পাঠ করিয়া রাষ্টিক ও সামাজিক আত্মকর্তৃত্ব ও মুক্তির প্রসঙ্গ আলোচনা করেন ; জনশ্রুতি, এইজন্য র্তাহার গ্রেপ্তার হইবার সম্ভাবনাও ঘটিয়াছিল। “যখন বঙ্গের গবর্নর টাউনহলে শ্ৰীমতী বেসান্টের স্বাধীনতালৈাপের প্রতিবাদ করিতে দিবেন। না বলিযা হুকুম জারি করেন, তখন বাক্যস্ফুর্তি ‘রাজনীতি-ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ ("novice in politics") রবীন্দ্রনাথেরই হইয়াছিল, তখন তিনিই রামমোহন লাইব্রেরিতে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম পড়িয়া বঙ্গের ভীতিবিহবল নীরবতা ভঙ্গ করিয়াছিলেন, বঙ্গের রাজনৈতিক মহারথীরা করেন নাই ।”** ‘দেশ দেশ নন্দিত করি মন্দ্ৰিত তব ভেরী গানটি এই সময় রচিত ও রামমোহন লাইব্রেরির সভায় সর্বপ্রথম সাধারণ্যে গীত হয়; গানটি প্রবাসীতে ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম প্রবন্ধের অনুবৃত্তিরূপে প্ৰথম প্রকাশিত হয় । জ্ঞানচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, সম্ভবত এই প্রবন্ধে বিবৃত সমাজ-সংক্রান্ত মতামত প্রসঙ্গে, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পত্রব্যবহার করেন ; তদুত্তরে রবীন্দ্রনাথ যে চিঠি লেখেন তাহা মুদ্রিত হইল : আপনার পত্ৰখানি পড়িয়া আনন্দিত হইলাম। কিছুদিন হইতে বাংলাদেশের যুবকদের ভাবগতিক দেখিয়া বড়োই হতাশ হইতেছিলাম। স্বদেশভক্তির নাম লইয়া বিচারবুদ্ধির অন্ধতা সমস্ত দেশে ব্যাপ্ত হইয়াছে। এমন-কি আমার এই বিদ্যালয়ে অল্পবয়সে যে-সব ছাত্র আসে। তারাও এমন একটা বিরুদ্ধ বুদ্ধি লইয়া আসে যে হার মানিতে হয়। যে মৃঢ়তা স্বাভাবিক তার প্রতিকার আছে। কিন্তু যে মূঢ়তা কৃত্রিম— যাহা জোর করিয়া কোমর বাধিয়া সর্বত্র তাল ঠুকিয়া বেড়ায়, তার সঙ্গে পারিয়া ওঠা দায় । আমি একরকম হাল ছাড়িবার চেষ্টাতেই ছিলাম, এমন সময় এই বক্তৃতার তাগিদ আসিল । আর যাই হােক একটা দেখিলাম, রাক্ষসটাকে যত প্ৰকাণ্ড প্রবল বলিয়া মনে হইত উহার জোর ততটা নয়। উহার আয়তন বড়ো, কিন্তু ভিতরটা ভুয়াে একটু ধাক্কা মারিলেই দেখি টলমল করিয়া উঠে । সুতরাং যে পর্যন্ত না কান্ত হইয়া পড়ে মাঝে মাঝে ধাক্কা মারিবার সংকল্প রহিল। দূর হইতে আপনাদের উৎসাহবাণী কাজে লাগিবে। ইতি ৬ Ve Q \9 N8 (?8 प्रष्ठा ° ७6 ‘দেড়শো বছর ভারতে ইংরেজ-শাসনের পর আজ এমন কথা শোনা গেল, মাদ্রাজ গবমেন্ট ভালোমন্দ যাই করুক বাংলাদেশে তা লইয়া দীর্ঘনিশ্বাসটি ফেলিবার অধিকার বাঙালির নাই। এতদিন এই জানিতাম, ইংরেজের অখণ্ড শাসনে মাদ্রাজ বাংলা পাঞ্জাব মারাঠা ভিতরে বাহিরে এক হইয়া উঠিতেছে এই গৌরবই ইংরেজ সাম্রাজ্যের মুকুটের কোহিনুর মণি । বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের দুৰ্গতিকে আপনি দুৰ্গতি মনে করিয়া ইংরেজ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিতে ছুটিয়াছে, সমুদ্রের পশ্চিমপারে যখন এই বার্তা তখন সমুদ্রের পূর্বপারে এমন নীতি কি একদিনও খাটিবে যে, মাদ্রাজের ভালোমন্দ সুখদুঃখে বাঙালীর কোনো মাথাব্যথা নাই ? এমন হুকুম কি আমরা মাথা হেঁট করিয়া মানিব ?” ৫৫। প্রবাসী, ভাদ্র ১৩২৪, বিবিধ প্রসঙ্গ, 'প্ৰতিবাদের অধিকার । , ৫৬ প্রবাসী, কার্তিক ১৩২৪, বিবিধ প্রসঙ্গ, রবীন্দ্রনাথের মহত্ত্ব’ ।