পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rbr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী পায়। পূর্বে বলা হইয়াছে প্রেমেই যথার্থ স্বাধীনতা। কারণ, যতটা দেখা যায় প্রেমে তার চেয়ে ঢের বেশি দেখাইয়া দেয়। জগৎকে কখন মিথ্যা মনে করিতে পারি না, যখন জগৎকে ভালোবাসি! একজন যে-সে লোক মরিয়া গেলে আমরা সহজেই মনে করিতে পারি যে, এ লোকটা একেবারে ধবংস হইয়া গেল, কারণ সে আমার নিকট এত ক্ষুদ্র! কিন্তু একজন প্ৰিয় ব্যক্তির মরণে আমাদের মনে হয় এ কখনো মরিতে পারে না। কারণ তাহার মধ্যে আমরা অসীমতা দেখিতে পাইয়াছি। যাহাকে এত বেশি ভালোবাসিয়াছি সে কি একেবারে “নাই” হইয়া যাইতে পারে! সে তো কম লোক নয়! তাহাকে যতখানি হৃদয় দিয়াছি ততখানিই সে গ্রহণ করিয়াছে, তাহার উপরে যতই আশা স্থাপন কবিয়াছি ততই আশা ফুরায় নি, রাজবদ্ধ লৌহখণ্ডের মতো আমার সমস্তটা তাহার মধ্যে ফেলিয়া মাপিতে চেষ্টা করিয়াছি— তাহার তল পাই নাই। যাহার নিকট হইতে সীমা যতদূরে তাহার নিকট হইতে মৃত্যুও ততদূরে। অতএব এতখানি বিশালতার এক মুহুর্তের মধ্যে সর্বতোভাবে অন্তর্ধান এ কখনো সম্ভবপর নহে। প্ৰেম আমাদের হৃদয়ের ভিতর হইতে এই কথা বলিতেছে, তর্ক যাহা বলে বলুক। অতএব দেখা যাইতেছে, প্ৰেম আসিয়াই আমাদের শিক্ষা দেয় এ জগৎ সত্য এবং প্রেমই বলে সত্য উপরে ভাসিতেছে না, সত্য ইহার অভ্যন্তরে নিহিত আছে। যাহা হউক পথ দেখিতে পাইলাম, আশা জন্মিতেছে ক্ৰমে তাহাকে পাইতে ও পারি। ইহাকে অবিশ্বাস করিয়া মরণকে বিশ্বাস করিলে কী সুখ । হৃদয়ের সভ্যতার যতই উন্নতি হইবে এই মরণের প্রতি বিশ্বাস ততই চলিয়া যাইবে, জীবনের প্রতি বিশ্বাস ততই বাড়িবে। ভাল ক'রে পড়িব এ জগতের লেখা। শুধু এ অক্ষর দেখে কবিব না। ঘূণা। একে একে জগতের পৃষ্ঠা উলটিয়া ক্রমে যুগে যুগে হবে জ্ঞানের বিস্তার! বিশ্বের যথার্থ রূপ কে পায় দেখিতে । আখি মেলি চারি দিকে কবিব ভ্ৰমণ, ভালোবেসে চাহিব এ জগতের পানে, তবে তো দেখিতে পাব স্বরূপ হঁহার ! mы сы ര 8፫mN (20ध (य5||5 একেবারেই প্রেমের যোগ্য নহে। এমন জীব কোথায়! যত বড়োই পাপী অসাধু কুশ্রী সে হউক-না কেন, তাহার মা তো তাহাকে ভালোবাসে। অতএব দেখিতেছি, তাহাকেও ভালোবাসা যায়, তবে আমি ভালোবাসিতে না পারি সে আমার অসম্পূর্ণতা। 어 যেমন, জড়ই বলো আর প্রাণীই বলো সকলেরই মধ্যে এক মহা চৈতন্যের নিয়ম কাৰ্য্য করিতেছে, যাহাতে করিয়া উত্তরোত্তর প্রাণ অভিব্যক্ত হইয়া উঠিতেছে, তেমনি পাপীই বলে। আর সাধুই বলো সকলেরই মধ্যে অসীম পুণ্যের এক আদর্শ বর্তমান থাকিয়া কাৰ্য করিতেছে। স্বর্গের পাথেয় সকলেরই কাছে রহিয়াছে, কেহই তাহা হইতে বঞ্চিত নহে। তবে কেহ-বা সোজা রাজপথে চলিয়াছে, কেহ-বা নিৰ্বদ্ধিতাবশতই হউক, কৌতুহলবশতই হউক, একবার মোড় ফিরিয়া গলির মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে,