পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী অন্ধকার ততই বাড়িতেছে, ইহা কি কেহ অস্বীকার করিতে পরিবেন ? বিজ্ঞানের আলো আর কী <FG3, GKKF “makes the darkness visible"— fRISTIN STOR TEKKI TOTfRISK অন্ধকারের মহাদেশ বাহির করিতেছেন। নিশাচরী কবিতার পক্ষে এমন সুখের সময় আর কী হইতে পারে! সে রহস্যপ্রিয়, কিন্তু এত রহস্য কি আর কোনো কালে ছিল! এখন একটা রহস্যের আবরণ খুলিতে গিয়া দশটা রহস্য বাহির হইয়া পড়িতেছে। বিধাতা রহস্য দিয়া রহস্য আবৃত করিয়া রাখিয়াছেন। একটা রহস্যের রক্তবীজকে হত্যা করিতে গিয়া তাহার লক্ষ লক্ষ রক্তবিন্দুতে লক্ষ লক্ষ রক্তবীজ জন্মিতেছে। মহাদেব রহস্য-রাক্ষসকে এইরূপ বর দিয়া রাখিয়াছেন, সে তাহার বরে অমর। যেমন, এমন ঘোরতর অজ্ঞ কেহ কেহ আছে যে নিজের অজ্ঞতার বিষয়েও অজ্ঞ, তেমনি প্ৰাচীন অজ্ঞানের সময় আমরা রহস্যকে রহস্য বলিয়াই জানিতাম না। অজ্ঞানের একটা বিশেষ ধর্ম এই যে, সে রহস্যের একটা কল্পিত আকার আয়তন ইতিহাস ঠিকুজি কুষ্টি পর্যন্ত তৈরি করিয়া ফেলে এবং তােহাঁই সত্য বলিয়া মনে করে। অর্থাৎ প্রাচীন কবিরা রহস্যের পৌত্তলিকতা সেবা করিতেন। এখনকার কবিরা জ্ঞানের অস্ত্রে তাহার আকার আয়তন ভাঙিয়া ফেলিয়া তাহাকে আরো রহস্য করিয়া তুলিতেছেন। এই নিমিত্ত প্রাচীন কালের অজ্ঞান অবস্থা কবিতার পক্ষে তেমন উপযোগী ছিল না। পৌরাণিক সৃষ্টিসমূহ দেখিলে আমাদের কথার প্রমাণ হইবে। বহুকাল চলিয়া আসিয়া এখন তাহা আমাদের হৃদয়ের মধ্যে বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে, সুতরাং এখন তাহা কবিতা হইয়া দাঁড়াইয়াছে, কারণ এখন তাঁহাতে আমাদের মনে নানা ভাবের উদ্রেক করে। কিন্তু পাঠকেরা যদি ভাবিয়া দেখেন যে এখনকার কোনো কবি যথার্থ সত্য মনে করিয়া যেরূপ করিয়া উষা বা সন্ধ্যার একটা গড়ন বাধিয়া দেন, সকল লোকেই যদি তাহাই অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলিয়া শিরোধাৰ্য করিয়া লয় তাহা হইলে কবিতার রাজ্য কি সংকীর্ণ হইয়া আসে। কত লোকে সন্ধ্যা ও উষাকে কল্পনায় কত ভাবে কত আকারে দেখে, এক সময় এক রকম দেখে, আর-এক সময়ে আর-এক রকমে দেখে, কিন্তু পর্বোক্তারাপ করিলে তাহদের সকলেরই কল্পনার মধ্যে একটা বিশেষ ছাচি তৈরি করিয়া রাখা হয়- উষা ও সন্ধা যখনই তাহার মধ্যে গিয়া পড়ে তখনি একটা বিশেষ আকার ধারণ করিয়া বাহির হয়। -- যতই জ্ঞান বাড়িতেছে ততই কবিতার রাজ্য বাড়িতেছে। কবিতা যতই বাড়িতেছে কবিতার ততই শ্ৰমবিভাগের আবশ্যক হইতেছে, ততই খণ্ডকাব্য গীতিকাব্যের সৃষ্টি হইতেছে। চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি নিজের প্রাণের মধ্যে, পরের প্রাণের মধ্যে ও প্রকৃতির প্রাণের মধ্যে প্রবেশ করিবার ক্ষমতাকেই বলে কবিত্ব। যাহারা প্ৰকৃতির বহিৰ্দ্ধারে বসিয়া কবি হইতে যায় তাহারা কতকগুলা বড়ো বড়ো কথা, টানাবোনা তুলনা ও কাল্পনিক ভাব লইয়া ছন্দ নির্মাণ করে। মর্মের মধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য যে কল্পনা আবশ্যক করে তাহাই কবির কল্পনা; আর গোজামিলন দিবার কল্পনা- না পড়িয়া পণ্ডিত হইবার।- না অনুভব করিয়া কবি হইবার এক প্রকার গিলটি-করা কল্পনা আছে, তাহা জালিয়াতের কল্পনা। যিনি প্ৰাণের মধ্যে প্ৰবেশ করিয়া কবি হইয়াছেন তিনি সহজ কথার কবি, সহজ ভাবের কবি। কারণ, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তাহাকে দশ কথা বলিতে হয়, আর যিনি সত্য বলেন তাহাকে এক কথার বেশি বলিতে হয় না। তেমনি যিনি অনুভব করিয়া বলেন তিনি দুটি কথা বলেন, আর যে অনুভব না করিয়া বলে সে পাচ কথা বলে অথচ ভাব প্রকাশ করিতে পারে না। অতএব সহজ ভাষার, সহজ ভাবের, সহজ কবিতা লেখাই শক্ত, কারণ তাহাতে প্ৰাণের মধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিতে হয়। সকলের