পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সঙ্গী ૨8જે এখানে আসবার আগে ম আমাকে বললেন, “বাব, ভালে কাজ পেয়েছ, এইবার একটি বিয়ে করে, অামার অনেক দিনের সাধ মিটুক।” আমি বললুম, “অর্থাৎ কাজ মাটি করে। আমার ষে কাজ তার সঙ্গে বিয়ের তাল মিলবে না।” দৃঢ় সংকল্প, ব্যর্থ হল মায়ের অনুনয়। যন্ত্রতন্ত্র সমস্ত বেঁধে-ছেদে নিয়ে চলে এলুম জঙ্গলে । । এই বার আমার দেশব্যাপী কীৰ্তিসম্ভাবনার ভাবী দিগন্তে হঠাৎ যে একটুকু গল্প ফুটে উঠল, তাতে আলেয়ার চেহারাও আছে, আরও আছে শুকতারার। নীচের পাথরকে প্রশ্ন করে মাটির সন্ধানে বেড়াচ্ছিলুম বনে বনে। পলাশফুলের রাঙা রঙের মাতলামিতে তখন বিভোর আকাশ । শালগাছে ধরেছে মঞ্জরি, মৌমাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে ঝণকে ঝণকে । ব্যাবসাদাররা জে সংগ্রহে লেগে গিয়েছে। কুলের পাতা থেকে জমা করছে তসরের রেশমের গুটি । সাওতালরা কুড়োচ্ছে মহুয়৷ ফল । ঝিবুঝির শব্দে হালকা নাচের ওড়না ঘুরিয়ে চলেছিল একটি ছিপছিপে নদী, আমি তার নাম দিয়েছিলুম তনিক । এটা কারখানাঘর নয়, কলেজ ক্লাস নয়, এ সেই মুখতন্দ্রায় আবিল প্রদোষের রাজ্য যেখানে একল মন পেলে প্রকৃতি-মায়াবিনী তার উপরেও রংরেজিনীর কাজ করে— যেমন সে করে সূর্যাস্তের পটে । মনটাতে একটু আবেশের ঘোর লেগেছিল। মন্থর হয়ে এসেছিল কাজের চাল, নিজের উপরে বিরক্ত হয়েছিলুম ; ভিতর থেকে জোর লাগাচ্ছিলুম দাড়ে। মনে ভাবছিলুম, ট্রপিকাল আবহাওয়ার মাকড়সার জালে জড়িয়ে পড়লুম বুঝি। শয়তানি ট্রপিক্স্ এ দেশে জন্মকাল থেকে হাতপাথার হাওয়ায় হারের মন্ত্র চালাচ্ছে আমাদের রক্তে— এড়াতে হবে তার স্বেদসিক্ত জাদু । বেল পড়ে এল। এক জায়গায় মাঝখানে চর ফেলে দুভাগে চলে গিয়েছে নদী। সেই বালুর দ্বীপে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে বকের দল। দিনাবসানে রোজ এই দৃশ্বটি ইঙ্গিত করত আমার কাজের বাক ফিরিয়ে দিতে, ঝুলিতে মাটি-পাথরের নমুনা নিয়ে ফিরে চলছিলুম আমার বাংলোঘরে, সেখানে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে যাব। অপরাহ্ল আর সন্ধ্যার মাঝখানে দিনের যে একটা পোড়ো জমির মতো ফালতে অংশ আছে, একলা মানুষের পক্ষে সেইটে কাটিয়ে চলা শক্ত। বিশেষত নির্জন বনে । তাই আমি ওই সময়ট রেখেছি পরখ করার কাজে । ডাইনামোতে বিজলি বাতি জালাই, কেমিক্যাল নিয়ে মাইক্রস্কোপ নিয়ে নিক্তি নিয়ে বসি । এক-একদিন রাত দুপুর পেরিয়ে যায়। আজ আমার সন্ধানে এক জায়গায় ম্যাঙ্গানিজের লক্ষণ যেন ধরা পড়েছিল। তাই দ্রুত উৎসাহে চলেছিলুম। কাকগুলো মাথার উপর দিয়ে গেরুয়ারঙের আকাশে কী কী শব্দে চলেছিল বাসায় । २¢॥४१