পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢8 . ४ রবীন্দ্র-রচনাবলী । যদি দেখো, তা হলে মনে হবে সাধনায় খুশি হয়ে সরস্বতী কেবল ষে আবির্ভূত হয়েছেন র্তার বুদ্ধিলোকে তা নয়, রূপ নিয়ে এসেছেন তার কোলে। ঐ শয়তান ভবতোষ ঢুকল ওঁর স্বৰ্গলোকে । বুদ্ধি তার তীক্ষ, বচন তার অনর্গল। প্রথমে ভুললেন অধ্যাপক, তারপরে ভুলল তার নাতনি। ওদের অসহ অন্তরঙ্গত দেখে আমাদের হাত নিসপিস করত। “কিছু বলবার পথ ছিল না, বিবাহসম্বন্ধ পাকাপাকি স্থির হয়ে গিয়েছিল, কেবল অপেক্ষ ছিল বিলেত গিয়ে সিভিল সার্ভিসে উত্তীর্ণ হয়ে আসার। তার পাথেয় আর খরচ জুগিয়েছেন অধ্যাপক। লোকটার সর্দির ধাত ছিল। বধির ভগবানের কাছে আমরা দুবেল প্রার্থনা করেছি, বিবাহের পূর্বে লোকটা যেন মু্যমোনিয়া হয়ে মরে । কিন্তু মরে নি। পাস করেছে। করেই ইণ্ডিয়া গবর্মেন্টের উচ্চপদস্থ একজন মুরুব্বির মেয়েকে বিয়ে করেছে। লজ্জায় ক্ষোভে নিজের কাজ ছেড়ে দিয়ে মর্মাহত মেয়েটিকে নিয়ে অধ্যাপক কোথায় যে অন্তর্ধান করেছেন, তার খবর রেখে যান নি।’ চিঠিখানা পড়লুম। দৃঢ় সংকল্প করলুম, এই মেয়েটিকে তার লজ্জা থেকে অবসাদ থেকে উদ্ধার করব । 劇 ইতিমধ্যে অচিরার সঙ্গে কোনোরকম করে একটা কথা আরম্ভ করবার জন্তে মন ছটফট করতে লাগল। যদি বিজ্ঞানী না হয়ে হতুম সাহিত্যরসিক, কিংবা বাঙাল ন৷ হয়ে যদি হতুম-পশ্চিমবঙ্গের আধুনিক, তা হলে নিশ্চয় মুখে কথা বাধত না। কিন্তু বাঙালি মেয়েকে ভয় করি, চিনি নে ব’লে বোধ হয়। একটা ধারণা ছিল, হিন্দুনারী অজানা পরপুরুষমাত্রের কাছে একান্তই অনধিগম্য। খামক কথা কইতে যাই যদি, তা হলে ওর রক্তে লাগবে অশুচিত। সংস্কার জিনিসটা এমনি অন্ধ। এখানে কাজে যোগ দেবার পূর্বে কিছুদিন তো কলকাতায় কাটিয়ে এসেছি— আত্মীয়বন্ধুমহলে দেখে এলুম সিনেমামঞ্চপথবর্তিনী রঙমাখানো বাঙালি মেয়ে, যারা জাতবান্ধবী, তাদের— থাক্ তাদের কথা । কিন্তু অচিরার কোনো পরিচয় না পেয়েই মনে হল, ও আর-এক জাতের— এ কালের বাইরে অাছে দাড়িয়ে নির্মল আত্মমর্যাদায়, স্পর্শভীরু মেয়ে । মনে-মনে কেবলই ভাবছি, প্রথম একটি কথা শুরু করব কী করে। এই সময়ে কাছাকাছি দুই-একটা ডাকাতি হয়ে গিয়েছিল। মনে হল এই উপলক্ষে অচিরাকে বলি, ‘রাজাকে বলে আপনার জন্যে পাহারার বন্দোবস্ত করে দিই।’ ইংরেজ মেয়ে হলে হয়তো এই গায়েপড়া আমুকুল্যকে স্পর্ধ মনে করত, মাৰ্থ বাকিয়ে বলত, সে ভাবনা আমার ; কিন্তু এই বাঙালির মেয়ে যে কী ভাবে কথাট নেবে, আমার সে অভিজ্ঞতা নেই। দীর্ঘকাল বাংলার বাইরে থেকে আমার মনের অভ্যাস অনেকখানি জড়িয়ে গেছে বিলিতি সংস্কারে । o