পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বপরিচয় । ৩৬১ পেয়াদাকেই পোস্টমাস্টার বন্ধ করে রাখত। অথচ কোনো আলোই যদি না নিত সবই হত সাদা, তবে সেই একাকারে সব জিনিসেরই প্রভেদ যেত ঘুচে। ষেন সাতটা পেয়াদার সব চিঠিই তাল পাকিয়ে একখান করা হত, কোনো স্বতন্ত্র খবরই পাওয়৷ যেত না। একই চেহারায় সবাইকে দেখাকে দেখা বলে না। না-আলে। আর পূর্ণ-আলো কোনোটাতেই আমাদের দেখা চলে না, আমরা দেখি ভাঙা আলোর মেলামেশায় । ነ . . . সূর্যকিরণের সঙ্গে জড়ানো এমন অনেক ঢেউ আছে, যার অতি অল্প পরিমাণে আসে বলে অনুভব করতে পারি নে। এমন ঢেউও আছে যার প্রচুর পরিমাণেই নেমে আসে, কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তাদের আটক করে। নইলে জলে পুড়ে মরতে হত। স্বর্ষের যে পরিমাণ দান আমরা সইতে পারি প্রথম থেকেই তাই নিয়ে আমাদের দেহতন্ত্রের বোঝাপড়া হয়ে গেছে। তার বাইরে আমাদের জীবনযাত্রার কারবার বন্ধ । বিশ্বছবিতে সব চেয়ে যা আমাদের চোখে পড়ে সে হল নক্ষত্ৰলোক, আর সূর্য, সেও একট। নক্ষত্র। মানুষের মনে এতকাল এর প্রাধান্ত পেয়ে এসেছে। বর্তমান যুগে সব চেয়ে মানুষকে আশ্চর্য করে দিয়েছে এই বিশ্বের ভিতরকার লুকানো বিশ্ব, যা অতি সূক্ষ্ম, যা চোখে দেখা যায় না, অথচ যা সমস্ত স্বাক্টর মূলে । একটা মাটির ঘর নিয়ে যদি পরখ ক’রে বের করতে চাই তার গোড়াকার জিনিসট কী, তা হলে পাওয়া যাবে ধুলোর কণা। যখন তাকে আর গুড়ে করা চলবে না তখন বলব এই অতি স্বল্প ধুলোই মাটির ঘরের আদিম মালমশলা । তেমনি করেই মানুষ একদিন ভেবেছিল, বিশ্বের পদার্থগুলিকে ভাগ করতে করতে যখন এমন স্থক্ষ্মে এসে । ঠেকবে ষে তাকে আর ভাগ করা যাবে না তখন সেইটেকেই বলব বিশ্বের আদিভূত, অর্থাৎ গোড়াকার সামগ্রী। আমাদের শাস্ত্রে তাকে বলে পরমাণু, যুরোপীয় শাস্ত্রে বলে অ্যাটম । এরা এত সুহ্ম যে দশকোটি পরমাণুকে পাশাপাশি সাজালে তার হবে এক ইঞ্চি মাত্র । সহজ উপায়ে ধুলোর কণাকে আর আমরা ভাগ করতে পারি নে কিন্তু বৈজ্ঞানিক তাড়নে বিশ্বের সকল সামগ্রীকে আরও অনেক বেশি স্থক্ষ্মে নিয়ে যেতে পেরেছে। শেষকালে এসে ঠেকেছে বিরেনবাইট। অমিশ্র পদার্থে। পণ্ডিতেরা বললেন এদেরই মোগ-বিয়োগে জগতের যতকিছু জিনিস গড় হয়েছে, এদের সীমান্ত পেরোবার জোনেই । २¢|२६