পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૧૦ রবীন্দ্র-রচনাবলী হল । অত্যন্ত হালকা বলে এতদিন হাইড্রজেন গ্যাস দিয়ে আকাশযানগুলোর উড়নশক্তির জোগান দেওয়া হত। কিন্তু হাইড্রজেন গ্যাস ওড়াবার পক্ষে যেমন কেজে, জালাবার পক্ষে তার চেয়ে কম না। এই গ্যাস অনেক মন্ত মন্ত উড়োজাহাজকে জালিয়ে মেরেছে। হীলিয়ম গ্যাসের মধ্যে প্রচ্ছন্ন দুরন্ত জলনচণ্ডী নেই, অথচ হাইড্রজেন ছাড়া সকল গ্যাসের চেয়ে এ হালকা। তাই জাহাজ-ওড়ানোকে নিরাপদ করবার জন্তে তারই ব্যবহার চলতি হয়েছে। চিকিৎসাতেও কোনো কোনো রোগে এর প্রয়োগ শুরু হল । _ পূর্বেই বলা হয়েছে পজিটিভ চার্জওয়াল পদার্থ ও নেগেটিভ চার্জওয়াল পদার্থ পরম্পরকে কাছে টানে কিন্তু একই জাতীয় চার্জওয়ালার পরস্পরকে ঠেলে ফেলতে চায়। যতই তাদের কাছাকাছি করা যায় ততই উগ্র হয়ে ওঠে তাদের ঠেলার জোর। তেমনি বিপরীত চার্জওয়ালারা যতই পরস্পরের কাছে আসে তাদের টানের জোর ততই বেড়ে ওঠে। এই জন্যে যেসব ইলেকট্রন কেন্দ্রবস্তুর কাছাকাছি থাকে তার টানের জোর এড়াবার জন্তে দূরবর্তীদের চেয়ে দৌড়য় বেশি জোরে। - সৌরমণ্ডলে যেসব গ্রহ হুর্যের যত কাছে তাদের দৌড়ের বেগ ততই বেশি। দূরের গ্রহদের বিপদ কম, তারা অনেকটা ধীরেস্থস্থে চলে। এই ইলেকট্রন প্রোটনের ব্যাস সমস্ত পরমাণুর পঞ্চাশ হাজার ভাগের এক ভাগ । অর্থাৎ পরমাণুর মধ্যে শূন্ততাই বেশি। একটা মানুষের দেহের সমস্ত পরমাণু যদি ঠেসে দেওয়া হয়, তা হলে তার থেকে একটি অদৃপ্তপ্রায় বস্তুবিন্দু তৈরি হবে। দুই প্রোটনের পরস্পরের প্রতি বিমুখতার জোর যে কত, রসায়নী ফ্রেডরিক সডি তার হিসাব করে বলেছেন, এক গ্র্যাম পরিমাণ প্রোটন যদি ভূতলের এক মেরুতে রাখা যায় আর তার বিপরীত মেরুতে থাকে আর-এক গ্র্যাম প্রোটন তা হলে এই মুদূর পথ পেরিয়ে গিয়ে তাদের উভয়েরই ঠেলা মারার জোর হবে প্রায় ছ শো মণের চাপে । এই যদি বিধি হয় তা হলে বোঝা শক্ত হয় পরমাণুকেন্দ্রের অতি সংকীর্ণ মণ্ডলীর মধ্যে একটির বেশি প্রোটন কেমন করে ঘেঁষাৰ্ঘেষি মিলে থাকতে পারে। এই নিয়ম অনুসারে হাইড্রজেন যার পরমাণুকেন্দ্রে একেশ্বর প্রোটনের অধিকার, সে ছাড়া বিশ্বে আর কোনো পদার্থ তো টি"কতেই পারে না ; তা হলে তো বিশ্বজগৎ হয়ে ওঠে হাইড্রজেনময় । 14 এদিকে দেখা যায় যুরেনিয়ম ধাতু বহন করেছে ৯২টা প্রোটন, ১৪৬টা স্থ্যটুন। এত বেশি ভিড় সে সামলাতে পারে না একথা সত্য, ক্ষণে ক্ষণে সে তার কেন্দ্রভাণ্ডার থেকে বৈদ্যুতকণার বোঝা হালকা করতে থাকে। ভার কিছু পরিমাণ কমলে সে ।