পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిపి রবীন্দ্র-রচনাবলী একটু সময় লাগেই ; সে এতই অল্প যে তা মাপা শক্ত। কিন্তু পণ্ডিতেরা তাও মেপেছেন । তারা পরীক্ষা করে স্থির করেছেন যে মানুষের শরীরের মধ্য দিয়ে দৈহিক ঘটনা অনুভূতিতে পৌছয় সেকেণ্ডে প্রায় একশে ফুট বেগে । মনে করা যাক, এমন একটা দৈত্য আছে, পৃথিবী থেকে হাত বাড়ালে যার হাত স্বর্ষে পৌছতে পারে। দুঃসাহসী দৈত্যের হাত যতই শক্ত হোক, সুর্যের গা ছোবামাত্রই যাবে পুড়ে। কিন্তু পুড়ে যাওয়ার যে ক্ষতি ও যন্ত্রণা নাড়ীযোগে সেটা টের পেতে তার লাগবে প্রায় একশো ষাট বছর। তার আগেই সে মারা যায় তো জানবেই না। স্বর্ষের ব্যাস ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার মাইল ; ১১০টি পৃথিবী পাশাপাশি এক সরল রেখায় রাখলে সুর্যের এক প্রাস্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌছতে পারে। সূর্যের ওজন পৃথিবীর চেয়ে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার গুণ বেশি, তাই নিজের দিকে সে টান দিতে পারে সেই পরিমাণ ওজনের জোরে। এই টানের জোরে স্বর্য পৃথিবীকে আপন আয়ত্তে বেঁধে রাখে, কিন্তু দৌড়ের জোরে পৃথিবী আপন স্বাতন্ত্র্য রাখতে পেরেছে। গোল আলুর ঠিক মাঝখান দিয়ে উপর থেকে নিচে পর্যন্ত যদি একটা শল চালিয়ে দেওয়া যায় আর সেই শলাটার চারদিকে যদি আলুটাকে ঘোরানো যায়, তা হলে সেই ঘোরা যেমন হয় সেই রকম হয় ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীর একবার করে ঘুর-খাওয়া। আমরা বলি, পৃথিবী আপন মেরুদণ্ডের চার দিকে ঘুরছে। আমাদের শলাফোড়া আলুটার সঙ্গে পৃথিবীর তফাত এই যে, তার এ রকম কোনো শলা নেই। মেরুদণ্ড কোনো দণ্ডই নয়। যে জায়গাটাতে শলা থাকতে পারত কাল্পনিক সোজা লাইনের সেই জায়গাটাকেই বলি মেরুদণ্ড । যেমন লাটিম । সে ঘোরে আপন মাঝখানের এমন একটা খাড়া লাইনের চার দিকে যে-লাইনটা মনে-করে-নেওয়া । । মেরুদণ্ডের চার দিকে পৃথিবীর এক পাক ঘুরতে লাগে চব্বিশ ঘণ্টা। স্বৰ্ষও আপন মেরুদণ্ডের চার দিকে ঘোরে। ঘুরতে কতক্ষণ লাগে তা যে উপায়ে জানা গেছে সেকথা বলি। খুব ভোরে যখন আলোতে চোখ ধাধায় না তখন স্বর্ষের দিকে তাকালে হয়তো দেখা যাবে সূর্যের গায়ে কালে কালে দাগ আছে। এক-একটি কালো দাগ সময়ে সময়ে এত বড়ো হয়ে প্রকাশ পায় যে, সমস্ত গ্রহ, উপগ্রহ একত্র করলেও তার সমান হয় না। ছোটো দাগগুলি মিলিয়ে যেতে বেশিদিন লাগে না, কিন্তু বড়ো বড়ে৷ দাগ দু-তিন সপ্তাহ থাকে। দুরবীন দিয়ে দেখলে মনে হয় যেন এর ক্রমাগত ডানদিকে ঘুরে যাচ্ছে, কিন্তু আসলে ঘুরছে এদের সবাইকে গায়ে নিয়ে সূর্য। এই কালে দাগের অনুসরণ করে এই ঘুরে যাওয়ার সময়টার হিসাব পাওয়া গেছে ; প্রমাণ হয়েছে যে, পৃথিবী ঘোরে চব্বিশ ঘণ্টায়, সূর্ব ঘোরে ছাব্বিশ দিনে। * ,