পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

› ዓww রবীন্দ্র-রচনাবলী নদীর ঘাটে বাধা নৌকার ছাদ হইতে মাঝিদের গান আকাশে ব্যাপ্ত হইতেছে। অনেকক্ষণ কোনো সাড়া না পাইয়া বধূ অতি ধীরে ধীরে রমেশকে স্পর্শ করিয়া কহিল, “ঘুমাইতেছ?” রমেশ কহিল, “না।” তাহার পরেও অনেকক্ষণ রমেশের আর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। বধু কখন আস্তে আস্তে ঘুমাইয়া পড়িল। রমেশ উঠিয়া বসিয়া তাহার নিত্রিত মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। বিধাতা ইহার ললাটে যে গুপ্তলিখন লিখিয়া রাথিয়াছেন, তাহা আজও এই মুখে একটি অঁাক কাটে নাই। এমন সৌন্দর্যের ভিতরে সেই ভীষণ পরিণাম কেমন করিয়া প্রচ্ছন্ন হইয়া বাস করিতেছে । ولا\ বালিকা যে রমেশের পরিণীত স্ত্রী নহে, এ-কথা রমেশ বুঝিল, কিন্তু সে যে কাহার স্ত্রী, তাহ বাহির করা সহজ হইল না। রমেশ তাহাকে কৌশল করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বিবাহের সময় তুমি আমাকে যখন প্রথম দেখিলে, তখন তোমার কী মনে इड्रेल ?” 献 বালিকা কহিল, “আমি তো তোমাকে দেখি নাই, আমি চোখ নিচু করিয়া ছিলাম।” - রমেশ । তুমি আমার নামও শুন নাই ? বালিকা। যেদিন শুনিলাম বিবাহ হইবে, তাহার পরের দিনই বিবাহ হইয়া গেল— তোমার নাম আমি শুনিই নাই। মামী আমাকে তাড়াতাড়ি বিদায় করিয়া বঁচিয়াছেন । রমেশ । আচ্ছ, তুমি যে লিখিতে-পড়িতে শিথিয়াছ, তোমার নিজের নাম বানান করিয়া লেখে দেখি । রমেশ তাহাকে একটু কাগজ, একটা পেনসিল দিল। সে বলিল, “তা বুঝি আমি আর পারি না ! আমার নাম বানান করা খুব সহজ ।”— বলিয়া বড়ো বড়ো অক্ষরে নিজের নাম লিখিল— শ্ৰীমতী কমলা দেবী । রমেশ । আচ্ছা, মামার নাম লেখো । কমলা লিখিল— শ্ৰীযুক্ত তারিণীচরণ চট্টোপাধ্যায়। জিজ্ঞাসা করিল, “কোথাও ভুল হইয়াছে ?” রমেশ কহিল, “না। আচ্ছা, তোমাদের গ্রামের নাম লেখো দেখি ।”