পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি >>° সময় পাওয়া যাইবে । বুঝিয়াছ রমেশ, এত তাড়া করিতাম না, কিন্তু আমার শরীরের জন্যই ভাবনা । রমেশ সম্মত হইল এবং আর-একটা পিল গিলিয়া বাড়ি চলিয়া গেল। : ১৩ বিদ্যালয়ের ছুটি নিকটবর্তী। ছুটির সময়ে কমলাকে বিদ্যালয়েই রাখিবার জন্ত রমেশ কত্রীর সহিত পূর্বেই ঠিক করিয়াছিল। রমেশ প্রত্যুষে উঠিয়া ময়দানের নির্জন রাস্তায় পদচারণা করিতে করিতে স্থির করিল, বিবাহের পর সে কমলা সম্বন্ধে হেমনলিনীকে সমস্ত ঘটনা আগাগোড়া বিস্তারিত করিয়া বলিবে । তাহার পরে কমলাকেও সমস্ত কথা বলিবার অবকাশ হইবে । এইরূপ সকল পক্ষে বোঝাপড়া হইয়া গেলে কমলা স্বচ্ছন্দে বন্ধুভাবে হেমনলিনীর সঙ্গেই বাস করিতে পারিবে। দেশে ইহা লইয়া নানা কথা উঠিতে পারে, ইহাই মনে করিয়া সে হাজারিবাগে গিয়া প্র্যাকটিস করিবে স্থির করিয়াছে । ময়দান হইতে ফিরিয়া আসিয়া রমেশ অন্নদীবাবুর বাড়ি গেল। সিড়িতে হঠাৎ হেমনলিনীর সঙ্গে দেখা হইল। অন্যদিন হইলে এরূপ সাক্ষাতে একটু কিছু আলাপ হইত। আজ হেমনলিনীর মুখ লাল হইয়া উঠিল,— সেই রক্তিমার মধ্য দিয়া একটা হাসির আভা উষার আলোকের মতো দীপ্তি পাইল— হেমনলিনী মুখ ফিরাইয় চোখ নিচু করিয়া দ্রুতবেগে চলিয়া গেল । রমেশ ষে গংটা হেমনলিনীর কাছ হইতে হারমোনিয়মে শিখিয়াছিল, বাসায় গিয়া সেইটে খুব করিয়া বাজাইতে লাগিল। কিন্তু একটিমাত্র গৎ সমস্তদিন বাজানে চলে না । কবিতার বই পড়িতে চেষ্টা করিল— মনে হইল, তাহার ভালোবাসার সুর ষে স্বদূর উচ্চে উঠিতেছে, কোনো কবিতা সে-পর্যন্ত নাগাল পাইতেছে না। আর হেমনলিনী অশ্রাস্ত আনন্দের সহিত তাহার গৃহকর্ম সমস্ত সারিয়া নিভৃত দ্বিপ্রহরে শয়নঘরের দ্বার বন্ধ করিয়া তাহার সেলাইটি লইয়া বসিয়াছে। মুখের উপরে একটি পরিপূর্ণ প্রসন্নতার শান্তি । একটি সর্বাঙ্গীণ সার্থকতা তাহাকে বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে । *H চায়ের সময়ের পূর্বেই কবিতার বই এবং হারমোনিয়ম ফেলিয় রমেশ অন্নদাবাবুর বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল। অন্তদিন হেমনলিনীর সহিত দেখা হইতে বড়ো বিলম্ব হইত না। কিন্তু আজ চায়ের ঘরে দেখিল সে-ঘর শূন্ত, দোতলায় বসিবার ঘরে দেখিল সে-ঘরও শূন্ত, হেমনলিনী এখনো তাহার শয়নগৃহ ছাড়িয়া নামে নাই। 6 IS 8