পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি Sసిఏ অন্ত লোককে নিজের নামে চালাইয়া পরীক্ষা দেওয়াইয়া পাস হইয়াছিল— হঠাৎ ধরা পড়িয়াছে।” LEF হেমনলিনী জানে, রমেশ মুখের উপর উত্তর দিতে পারে না— সেইজন্ত অক্ষয় রমেশকে যত আঘাত করিয়াছে, সে-ই তাহার প্রতিঘাত দিয়া আসিয়াছে। আজও থাকিতে পারিল না। গৃঢ় ক্রোধের লক্ষণ চাপিয়া ঈষৎ হাস্ত করিয়া কহিল, “অক্ষয় বলিয়া ঢের লোক বোধ হয় জেলখানায় আছে।” অক্ষয় কহিল, “ওই দেখুন, বন্ধুভাবে সংপরামর্শ দিতে গেলে আপনার রাগ করেন। তবে সমস্ত ইতিহাসটা বলি। আপনি তো জানেন, আমার ছোট বোন শরং বালিকা-বিদ্যালয়ে পড়িতে যায়। সে কাল সন্ধ্যার সময় আসিয়া কহিল, ‘দাদা, তোমাদের রমেশবাবুর স্ত্রী আমাদের ইস্কুলে পড়েন।’ “আমি বলিলাম, দূর পাগলী ! আমাদের রমেশবাবু ছাড়া কি আর দ্বিতীয় রমেশবাবু জগতে নাই ? শরং কহিল, তা বেষ্ট হোন, তিনি র্তার স্ত্রীর উপরে ভারি অন্তায় করিতেছেন। ছুটিতে প্রায় সব মেয়েই বাড়ি যাইতেছে, তিনি র্তার স্ত্রীকে বোর্ডিঙে রাখিবার বন্দোবস্ত করিয়াছেন । সে বেচারা কঁদিয়া কাটিয়া অনর্থপতি করিতেছে। আমি তখনি মনে মনে কহিলাম, এ তো ভালো কথা নহে, শরং যেমন ভুল করিয়াছিল, এমন ভুল আরও তো কেহ কেহ করিতে পারে ” অন্নদাবাবু হাসিয়া উঠিয়া কহিলেন, “অক্ষয়, তুমি কী পাগলের মতে কথা কহিতেছ ! কোন রমেশের স্ত্রী ইস্কুলে পড়িয়া কাদিতেছে বলিয়া আমাদের রমেশ নাম বদলাইবে নাকি ?” এমন সময়ে হঠাৎ বিবর্ণমুখে রমেশ ঘর হইতে উঠিয়া চলিয়া গেল। অক্ষয় বলিয়া উঠিল, “ও কী রমেশবাবু, আপনি রাগ করিয়া চলিয়া গেলেন নাকি ? দেখুন দেখি, আপনি কি মনে করেন আপনাকে আমি সন্দেহ করিতেছি ?” বলিয় রমেশের পশ্চাৎ পশ্চাৎ বাহির হইয়া গেল । অন্নদাবাবু কহিলেন, “এ কী কাণ্ড!” হেমনলিনী কঁাদিয়া ফেলিল। অন্নদাবাবু ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “ও কী হেম, কাদিস কেন ?” সে উচ্ছ্বলিত রোদনের মধ্যে রুদ্ধকণ্ঠে কহিল, “বাবা, অক্ষয়বাবুর ভারি অন্যায়। কেন উনি আমাদের বাড়িতে ভদ্রলোককে এমন করিয়া অপমান করেন ?” অন্নদাবাবু কহিলেন, “অক্ষয় ঠাট্টা করিয়া একটা কী বলিয়াছে, ইহাতে এত অস্থির হইবার কী দরকার ছিল ?”