পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९>२ রবীন্দ্র-রচনাবলী বেহীরা জানে না সে কোথায় গেছে, এ কী রকম লুকোচুরি ব্যাপার চলিতেছে ? আমার কাছে এতে কিছুই ভালো ঠেকিতেছে না। বাবা, তুমি এমন নিশ্চিন্ত আছ কী করিয়া ?” 叠 অন্নদাবাবু এই ভংগনায় হঠাৎ অত্যন্ত চিন্তিত হইবার চেষ্টা করিলেন। গম্ভীর মুখ করিয়া কহিলেন, “তাই তো, এ-সব কী ?” কাণ্ডজ্ঞানহীন রমেশ অনায়াসে কাল রাত্রে অন্নদাবাবুর কাছে বিদায় লইয়া যাইতে পারিত। কিন্তু সে-কথা তাহার মনে উদয়ও হয় নাই। ওই যে সে “বিশেষ প্রয়োজন আছে” বলিয়া রাখিয়াছে, তাহার মধ্যেই তাহার সকল কথা বলা হইয়া গেছে, এইরূপ রমেশের ধারণা। ওই এক কথাতেই আপাতত সকল রকমের ছুটি পাইয়াছে জানিয়া সে তাহার উপস্থিত কর্তব্যসাধনে বিব্রত হইয়া বেড়াইতেছে। যোগেন্দ্র । হেমনলিনী কোথায় ? অন্নদাবাবু। সে আজ সকাল-সকাল চা খাইয়া উপরেই গেছে। যোগেন্দ্ৰ কহিল, "রমেশের এই সমস্ত অদ্ভুত আচরণে বেচারা বোধ হয় অত্যন্ত লজ্জিত হইয়া আছে— সেইজন্য সে আমার সঙ্গে দেখা হইবার ভয়ে পালাইয় রহিয়াছে।” সংকুচিত ও ব্যথিত হেমনলিনীকে আশ্বাস দিবার জন্য যোগেন্দ্র উপরে গেল । হেমনলিনী তাহাদের বড়ো ঘরে চৌকির উপরে চুপ করিয়া একা বসিয়া ছিল। যোগেন্দ্রের পদশব্দ শুনিয়াই সে তাড়াতাড়ি একটা বই টানিয়া লইয়া পড়িবার ভান করিল। যোগেন্দ্র ঘরে আসিতেই বই রাখিয়া উঠিয়া দাড়াইয়া হাসিমুখে কহিল, “এই যে দাদা, কখন এলে ? তোমাকে তো তেমন বিশেষ ভালো দেখাইতেছে না।” যোগেন্দ্র চৌকিতে বসিয়া-পড়িয়া কহিল, “ভালো দেখাইবার তো কথা নয়। আমি সব কথা শুনিয়াছি হেম । কিন্তু এ-সম্বন্ধে তুমি কোনো চিন্তা করিয়ো না। আমি ছিলাম না বলিয়াই এই রকম গোলমাল ঘটিতে পারিয়াছে । আমি সমস্ত ঠিক করিয়া দিব । আচ্ছা হেম, রমেশ তোমাকে কোনো কারণ বলে নাই ?” হেমনলিনী মুশকিলে পড়িল। রমেশ সম্বন্ধে এই সকল সন্দিগ্ধ আলোচনা তাহার পক্ষে অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে। রমেশ তাহাকে বিবাহদিন পিছাইবার কোনো কারণ বলে নাই, এ-কথা যোগেন্দ্রকে বলিতে তাহার ইচ্ছা নাই, অথচ মিথ্যা বলাও তাহার পক্ষে অসম্ভব । হেমনলিনী কহিল, “তিনি আমাকে কারণ বলিতে প্রস্তুত ছিলেন, আমি শোনা দরকার মনে করি নাই।”