পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ց(չԵ- রবীন্দ্র-রচনাবলী যাহাকে কাছে লইয়া অসংকোচে গুরুর মতো উপদেশ দিয়া আসিয়াছে, হঠাৎ তাহার সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাবে নলিনাক্ষকে যেন লজ্জা আঘাত করিল। নলিনাক্ষকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া ক্ষেমংকরী কহিলেন, "এবারে আমি তোমার কোনো আপত্তি শুনিব না। আমার জন্য তুমি যে এই বয়সে সমস্ত ছাড়িয়া দিয়া কাশীবাসী হইয়া তপস্যা করিতে থাকিবে, সে অামি আর কিছুতেই সহ করিব না। এইবারে যেদিন শুভদিন আসিবে সেদিন ফাক যাইবে না, এ আমি বলিয়া রাখিতেছি।” নলিনাক্ষ কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকিয়া কহিল, “তবে একটা কথা তোমাকে বলি মা। কিন্তু আগে হইতে বলিয়া রাখিতেছি, তুমি অস্থির হইয়া পড়িয়ে না। যে ঘটনার কথা বলিতেছি সে আজ নয়-দশ মাস হইয়া গেল, এখন তাহা লইয়া উতলা হইবার কোনো প্রয়োজন নাই। কিন্তু তোমার যেরকম স্বভাব মা, একটা অমঙ্গল কাটিয়া গেলেও তাহার ভয় তোমাকে কিছুতেই ছাড়িতে চায় না। এইজন্যই কতদিন তোমাকে বলিববলিব করিয়াও বলিতে পারি নাই। আমার গ্রহশাস্তির জন্য ষত খুশি স্বস্ত্যয়ন করাইতে চাও করাইয়ো, কিন্তু অনাবশ্যক মনকে পীড়িত করিয়ো না।” ক্ষেমংকরী উদবিগ্ন হইয়া কহিলেন, “কী জানি বাছা, কী বলিবে, কিন্তু তোমার ভূমিকা শুনিয়া আমার মন আরও অস্থির হয়। যতদিন পৃথিবীতে আছি নিজেকে অত করিয়া ঢাকিয়া রাখা চলে না। আমি তো দূরে থাকিতে চাই, কিন্তু মন্দকে তো খুজিয়া বাহির করিতে হয় না; সে আপনিই ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়ে। তা, ভালো হোক মন্দ হোক, বলে, তোমার কথাটা শুনি ।” নলিনাক্ষ কহিল, “এই মাঘমাসে আমি রংপুরে আমার সমস্ত জিনিসপত্র বিক্রি করিয়া, আমার বাগানবাড়িটা ভাড়ার বন্দোবস্ত করিয়া ফিরিয়৷ আসিতেছিলাম । সাড়ায় আসিয়া আমার কী বাতিক গেল, মনে করিলাম, রেলে না চড়িয়া নৌকা করিয়া কলিকাতা পর্যন্ত আসিব । সাড়ায় একখানা বড়ো দেশী নৌকা ভাড়া করিয়া যাত্রা করিলাম। দু দিনের পথ আসিয়া একটা চরের কাছে নৌকা বাধিয়া স্বান করিতেছি, এমন-সময় হঠাৎ দেখি, আমাদের ভূপেন এক বন্দুক হাতে করিয়া উপস্থিত। আমাকে দেখিয়াই তো সে লাফাইয়া উঠিল, কহিল, ‘শিকার খুজিতে আসিয়া খুব বড়ো শিকারটাই মিলিয়াছে। সে ওই দিকেই কোথায় ডেপুটি-ম্যাজিষ্ট্রেটি করিতেছিল, র্তাবুতে মফস্বল-ভ্রমণে বাহির হইয়াছে। অনেক দিন পরে দেখা, আমাকে তো কোনোমতেই ছাড়িবে না, সঙ্গে সঙ্গে ঘুরাইয়া বেড়াইতে লাগিল। ধোবাপুকুর বলিয়া একটা জায়গার এক দিন তাহার তাবু পড়িল। বৈকালে আমরা গ্রামে বেড়াইতে বাহির