পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

警》 নৌকাডুবি VSbr S হেমনলিনী কাতরকণ্ঠে কহিল, “বাবা, ও-সকল কথার আলোচনা থাক।” । অন্নদাবাবু কহিলেন, "মা, আলোচনা করিতে তে ইচ্ছা করেই না। কিন্তু বিধির বিপাকে অকস্মাং এক-এক জন লোকের সঙ্গে আমাদের সুখদুঃখ জড়িত হইয়া যায়, তখন তাহার কোনো আচরণকে আর উপেক্ষা করিবার জো থাকে না।” হেমনলিনী সবেগে বলিয়া উঠিল, “না না, সুখদুঃখের গ্রন্থি আমন করিয়া যেখানেসেখানে কেন জড়িত হইতে দিব। বাবা, আমি বেশ আছি, আমার জন্য বৃথা উদবিগ্ন হইয়া আমাকে লজ্জা দিয়ে না।” অন্নদাবাবু কহিলেন, “মা হেম, আমার বয়স হইয়াছে, এখন তোমার একটা স্থিতি না করিয়া তো অামার মন স্থির হইতে পারে না । তোমাকে এমন তপস্বিনীর মতো কি আমি রাখিয়া ষাইতে পারি ?” হেমনলিনী চুপ করিয়া রহিল। অন্নদাবাবু কহিলেন, “দেখো মা, পৃথিবীতে একটা আশা চূর্ণ হইল বলিয়াই যে আর-সমস্ত দুর্মূল্য জিনিসকে অগ্রাহ করিতে হইবে, এমন কোনো কথা নাই। তোমার জীবন কিসে স্বর্থী হইবে, সার্থক হইবে, আজ হয়তো মনের ক্ষোভে তাহা তুমি না জানিতেও পার ; কিন্তু আমি নিয়ত তোমার মঙ্গলচিস্তা করি— আমি জানি তোমার কিসে সুখ, কিসে মঙ্গল— আমার প্রস্তাবটাকে একেবারে উপেক্ষা করিয়ো না।” হেমনলিনী দুই চোখ ছলছল করিয়া বলিয়া উঠিল, “অমন কথা বলিয়ে না, আমি তোমার কোনো কথাই উপেক্ষা করি না । তুমি যাহা আদেশ করিবে আমি নিশ্চয় তাহা পালন করিব, কেবল একবার অন্তঃকরণটা পরিষ্কার করিয়া একবার ভালোরকম করিয়া প্রস্তুত হইয়া লইতে চাই ।” অন্নদাবাবু সেই অন্ধকারে একবার হেমনলিনীর অশ্রুসিক্ত মুখে হাত বুলাইয়া তাহার মস্তক স্পর্শ করিলেন । আর কোনো কথা কহিলেন না। পরদিন সকালে যখন অন্নদাবাবু হেমনলিনীকে লইয়া বাহিরে গাছের তলায় চ। খাইতে বসিয়াছেন, তখন অক্ষয় আসিয়া উপস্থিত হইল। অন্নদাবাবু নীরব প্রশ্নের সহিত তাহার মুখের দিকে চাহিলেন। অক্ষয় কহিল, “এখনো কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না।” এই বলিয়া এক পেয়ালা চা লইয়া সে সেখানে বসিয়া গেল । আস্তে আস্তে কথা তুলিল, "রমেশবাবু ও কমলার জিনিসপত্র কিছু-কিছু চক্রবর্তী মহাশয়ের ওখানে রহিয়া গেছে, সেগুলি তিনি কোথায় কাহার কাছে পাঠাইবেন, তাই ভাবিতেছেন। রমেশবাবু নিশ্চয়ই আপনাদের ঠিকানা বাহির করিয়া শীঘ্রই এখানে আসিবেন, তাই আপনাদের এখানে যদি—*