পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

votrŠ রবীন্দ্র-রচনাবলী তাকে ভালোবাসে। এ বাড়িতে যখন কোনো ঝগড়াঝাটি বাধে তখন নবীন সেটাকে সহজে মিটিয়ে দিতে পারে । নবীন সব কথায় হাসতে জানে, আর লোকদের শুধু কেবল সুবিচার করে না, এমন ব্যবহার করে যাতে প্ৰত্যেকেই মনে করে তারই পরে বুঝি ওর বিশেষ পক্ষপাত । নবীনকে মধুসূদন যে মনের সঙ্গে স্নেহ করে তার একটা প্রমাণ, মেতির মাকে মধুসূদন দেখতে পারে না। যার প্রতি ওর মমতা তার প্রতি ওর একাধিপত্য চাই। সেই কারণে মধুসূদন কেবল কল্পনা করে মোতির মা যেন নবীনের মন ভাঙাতেই আছে ; ছোটাে ভাইয়ের প্রতি ওর যে পৈত্রিক অধিকার বাইরে থেকে এক মেয়ে এসে সেটাতে কেবলই বাধা ঘটায়। নবীনকে মধুসূদন যদি বিশেষ ভালো না বাসিত তা হলে অনেক দিন আগেই মোতির মার নির্বাসনদণ্ড পাকা হত । মধুসূদন ভেবেছিল এইটুকু কাজ সেরেই আবার একবার আপিসে চলে যাবে। কিন্তু কোনোমতেই মনের মধ্যে জোর পেলে না। কুমু সেই- যে চিঠিখানা ছিড়ে দিয়ে চলে গেল সেই ছবিটি তার মনে গভীর করে আঁকা হয়ে গেছে। সে এক আশ্চর্য ছবি, এমনতরো কিছু সে কখনো মনে করতে পারত না। একবার তার চিরকালের সন্দেহ-করা স্বভাব্যবশত মধুসূদন ভেবেছিল নিশ্চয়ই কুমু চিঠিখন আগেই পড়ে নিয়েছে, কিন্তু কুমুর মুখে এমন একটি নির্মল সত্যের দীপ্তি আছে যে, বেশিক্ষণ তাকে অবিশ্বাস করা মধুসূদনের পক্ষেও অসম্ভব। কুমুকে কঠিনভাবে শাসন করবার শক্তি মধুসূদন দেখতে দেখতে হারিয়ে ফেলেছে, এখন তার নিজের তরফে যে-সব অপূর্ণতা তাই তাকে পীড়া দিতে আরম্ভ করেছে। তার বয়স বেশি এ কথা আজ সে ভুলতে পারছে না। এমন-কি, তার যে চুলে পাক ধরেছে সেটা সে কোনোমতে গোপন করতে পারল বঁাচে । তার রঙটা কালো, বিধাতার সেই অবিচার এতকাল পরে তাকে তীব্র করে বাজছে । কুমুর মনটা কেবলই তার মুষ্টি থেকে ফসকে যাচ্ছে, তার কারণ মধুসূদনের রূপ ও যৌবনের অভাব, এতে তার সন্দেহ নেই। এইখানেই সে নিরস্ত্র সে দুর্বল । চাটুজ্যেদের ঘরের মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু সে যে এমন মেয়ে পাবে বিধাতা আগে থাকতেই যার কাছে তার হার মানিয়ে রেখে দিয়েছেন, এ সে মনেও করে নি। অথচ এ কথা বলবারও জোর মনে নেই যে তার ভাগ্যে একজন সাধারণ মেয়ে হলেই ভালো হত, যার উপরে তার শাসন খাটত । মধুসূদন কেবল একটা বিষয়ে টেক্কা দিতে পারে। সে তার ধানে। তাই আজ সকালেই ঘরে জহর এসেছিল। তার কাছ থেকে তিনটে আংটি নিয়ে রেখেছে, দেখতে চায় কোনটাতে কুমুর পছন্দ। সেই ংটির কীেটা তিনটি পকেটে নিয়ে সে তার শোবার ঘরে গেল। একটা চুনি, একটা পান্না, একটা হীরের আংটি। মধুসূদন মনে মনে একটি দৃশ্য কল্পনাযোগে দেখতে পাচ্ছে। প্রথমে সে যেন চুনির আংটির কীেটা অতি ধীরে ধীরে খুললে, কুমুর লুব্ধ চােখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তার পরে বেরোল পান্না, তাতে চক্ষু আরো প্রসারিত । তার পর হীরে, তার বহুমূল্য উজ্জ্বলতায় রমণীর বিস্ময়ের সীমা নেই। মধুসূদন রাজকীয় গভীর্যের সঙ্গে বললে, “তোমার যেটা ইচ্ছে পছন্দ করে নাও।” হীরোটাই কুমু যখন পছন্দ করলে তখন তার লুব্ধতার ক্ষীণ সাহস দেখে ঈষৎ হাস্য করে মধুসূদন তিনটে আংটিই কুমুর তিন আঙুলে পরিয়ে দিলে। তার পরেই রাত্ৰে শয়নমঞ্চের যবনিকা উঠল। মধুসূদনের অভিপ্রায় ছিল এই ব্যাপারটা আজ রাত্রের আহারের পর হবে। কিন্তু দুপুরবেলাকার দুর্যোগের পর মধুসূদন আর সবুর করতে পারলে না। রাত্রের ভূমিকাঁটা আজ অপরান্ত্রে সেরে নেবার জন্যে অন্তঃপুরে গেল । গিয়ে দেখে কুমু একটা টিনের তোরঙ্গ খুলে শোবার ঘরের মেজেতে বসে গোছাচ্ছে। পাশে জিনিসপত্র কাপড়াচোপড় ছড়ানো ।

  • ी दैी क९ ! 6कांथN3 शाळू नादिके ?” “如阿 “কোথায় ?” “রািজবপুরে।”