পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(OO রবীন্দ্র-রচনাবলী দেখা আর আমারও। পশ্চিম দিকে থাকবে বইয়ের আলমারি, পিঠ দিয়ে সেটা রোদুর ঠেকাবে আর সামনের দিকে সেটাতে থাকবে দুটি পাঠকের একটিমাত্র। সারকুলেটিং লাইব্রেরি। ঘরের উত্তর দিকটাতে একখানি সোফা, তারই বা পাশে একটু জায়গা খালি রেখে আমি বসব এক প্রান্তে, তোমার কাপড়ের আলনার আড়ালে তুমি দাঁড়াবে, দু হাত তফাতে নিমন্ত্রণের চিঠিখানা উপরের দিকে ধরব কম্পিত হন্তে, তাতে লেখা থাকবে ছাদের উপরে বহিয়ে নীরবে: ওগো দক্ষিণ-হাওয়া প্ৰেয়সীর সাথে যে নিমেষে হবে চারি চক্ষুতে চাওয়া । এটা কি খারাপ শোনাচ্ছে বন্যা ।” “কিছু না মিতা। কিন্তু এটা সংগ্ৰহ হল কোথা থেকে ৷” “আমার বন্ধু নীলমাধবের খাতা থেকে । তার ভাবী বধু তখন অনিশ্চিত ছিল। তাকে উদ্দেশ করে ঐ ইংরেজি কবিতাটাকে কলকাতাই ছাচে ঢালাই করেছিল, আমিও সঙ্গে যোগ দিয়েছিলুম। ইকনমিকসে এম. এ. পাস করে পনেরো হাজার টাকা নগদাপণ আর আশি ভরি গয়না-সমেত নববধূকে লোকটা ঘরে আনলে, চার চক্ষে চাওয়াও হল, দক্ষিনে বাতাসও বয়, কিন্তু ঐ কবিতাটাকে আর ব্যবহার করতে পারলে না । এখন তার অপর শরিককে কাব্যটির সর্বস্বত্ব সমৰ্পণ করতে বাধবে না ।” “তোমারও ছাতে দক্ষিনে বাতাস বইবে, কিন্তু তোমার নববধু কি চিরদিনই নববধূ থাকবে ।” টেবিলে প্রবল চাপড় দিতে দিতে উচ্চৈঃস্বরে অমিত বললে, “থাকবে, থাকবে, থাকবে ।” যোগমায়া পাশের ঘর থেকে তাড়াতাড়ি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী থাকবে অমিত । আমার টেবিলটা বোধ হচ্ছে থাকবে না ।” 峰 “জগতে যা-কিছু টেকসই সবই থাকবে। সংসারে নববধু দুর্লভ, কিন্তু লাখের মধ্যে একটি যদি দৈবাৎ পাওয়া যায়, সে চিরদিনই থাকবে নববধু।” “একটা দৃষ্টান্ত দেখাও দেখি ।” AO “একদিন সময় আসবে, দেখাব ।” “বোধ হচ্ছে তার কিছু দেরি আছে, ততক্ষণ খেতে চলো ।” S SR শেষ সন্ধ্যা আহার শেষ হলে অমিত বললে, “কাল কলকাতায় যাচ্ছি মাসিমা । আমার আত্মীয়স্বজন সবাই সন্দেহ করছে। আমি খাসিয়া হয়ে গেছি।” “আত্মীয়স্বজনেরা কি জানে কথায় কথায় তোমার এত বদল সম্ভব ।” “খুব জানে। নইলে আত্মীয়স্বজন কিসের । তাই বলে কথায় কথায় নয়, আর খাসিয়া হওয়া নয়। যে বদল আজ আমার হল এ কি জাত-বদল। এ যে যুগ-বদল ! তার মাঝখানে একটা কল্পান্ত । প্রজাপতি জেগে উঠেছেন আমার মধ্যে এক নূতন সৃষ্টিতে । মাসিম, অনুমতি দাও, লাবণ্যকে নিয়ে আজ একবার বেড়িয়ে আসি। যাবার আগে শিলঙ পাহাড়কে আমাদের যুগল প্ৰণাম জানিয়ে যেতে " যোগমায়া সম্মতি দিলেন । কিছুদূরে যেতে যেতে দুজনের হাত মিলে গেল, ওরা কাছে কাছে এল ঘেঁষে । নির্জন পথের ধারে নীচের দিকে চলেছে ঘন বন । সেই বনের একটা জায়গায় পড়েছে ফাক, আকাশ সেখানে পাহাড়ের নজরবন্দি থেকে একটুখানি ছুটি পেয়েছে ; তার অঞ্জলি ভরিয়ে নিয়েছে অন্তসূর্যের শেষ আভায় । সেইখানে পশ্চিমের দিকে মুখ করে দুজনে দাঁড়াল। অমিত লাবণ্যর মাথা