পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VVSOV ब्रदोक्ष-ब्रा5नावी আধ-টুকরা অনুগ্রহ না দেন তো নাই দিলেন । , কর্তৃপক্ষের প্রতি অভিমান করিয়া যে এ কথা বলা হইতেছে তাহা নহে। মনে বড়ো ভয় আছে— আমরা মৃৎপাত্র ; কাংস্যপাত্রের সহিত বিবাদ চুলায় যাউক, আত্মীয়তাপূর্বক শেকহ্যান্ড করিতে গেলেও আশঙ্কার সম্ভাবনা জন্মে । কারণ, এত অনৈক্যের সংঘাতে আত্মরক্ষা করা বড়ো কঠিন । আমরা দুর্বল বলিয়াই ভয় হয় যে, সাহেবের কাছে যদি একবার ঘেঁষি- সাহেব যদি অনুগ্রহ করিয়া আমার প্রতি কিছু সুপ্ৰসন্ন হাস্য বর্ষণ করে- তাহার প্রলোভন আমার কাছে বড়ো বেশি ; এত বেশি যে, সে অনুগ্রহের তুলনায় আমাদের যথার্থ হিত আমরা ভুলিয়া যাইতে পারি। সাহেব যদি হাসিয়া বলিয়া বসে, বাঃ বাবু, তুমি তো ইংরাজি মন্দ বল না, তাহার পর হইতে বাংলার চর্চা করা আমার পক্ষে বড়োই কঠিন হইয়া উঠে । যে বহিরাংশে ইংরাজের অনুগ্রহদৃষ্টি পড়ে সেই অংশেরই চাকচিক্যসাধনে প্রবৃত্তি হয়, যে দিকটা য়ুরোপের চক্ষুগোচর হইবার সম্ভাবনা নাই সে দিকটা অন্ধকারে অনাদরে আবর্জনায় আচ্ছন্ন হইয়া থাকে। সে দিকের কোনোরূপ সংশোধনে হাত দিতে আলস্য বোধ হয় । মানুষকে দোষ দিতে পারি না ; অকিঞ্চন অপমানিতের পক্ষে এ প্রলোভন বড়ো স্বাভাবিক— সৌভাগ্যবানের প্রসন্নতায় তাহাকে বিচলিত না করিয়া থাকিতে পারে না । আজ আমি বলিতেছি, ভারতবর্ষের দীনতম মলিনতম কৃষককেও আমি ভাই বলিয়া আলিঙ্গন করিব, আর ঐ-যে রাঙা সাহেব টমটম স্থাকাইয়া আমার সর্বাঙ্গে কাদা ছিটাইয়া চলিয়া যাইতেছে, উহার সহিত আমার কানাকড়ির সম্পর্ক নাই। ঠিক এমন সময়টিতে যদি উক্ত রাঙা সাহেব হঠাৎ টমটম থামাইয়া আমারই দরিদ্র কুটিরে পদার্পণ করিয়া বলে, বাবু, তোমার কাছে দেশলাই আছে, তখন ইচ্ছা করে- দেশের পঞ্চবিংশতি কোটি লোক সারি সারি কাতার দিয়া দাড়াইয়া দেখিয়া যায় যে, সাহেব আজ আমারই বাড়িতে দেশলাই চাহিতে আসিয়াছে। এবং দৈবাৎ ঠিক সেই সময়টিতে যদি আমার দীনতম মলিনতম কৃষকভাইট মা-ঠাকরুনকে প্ৰণাম করিবার জন্য আমার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হয় তখন সেই কুৎসিত দৃশ্যটিকে ধরণীতলে বিলুপ্ত করিয়া দিতে ইচ্ছা করে, পাছে সেই বর্বরের সহিত আমার কোনো যোগ, কোনো সংস্রব, কোনো সুদূর ঐক্য বড়োসাহেবের কল্পনাপথে উদিত হয়। অতএব, যখন মনে মনে বলি সাহেবের কাছে আর ঘোষিব না। তখন অহংকারের সহিত বলি না, বড়ো বিনয়ের সহিত, বড়ো আশঙ্কার সহিত বলি। জানি যে, সেই সৌভাগ্যগর্বেই আমার সর্বাপেক্ষা সর্বনাশ হইবে- আমি আর নিভৃতে বসিয়া আপনার কর্তব্যপালন করিতে পারিব না, মনটা সর্বদাই উড়ু-উড়ু করিতে থাকিবে এবং আপনাদের দরিদ্র স্বজনের খ্যাতিহীন গৃহটাকে বড়োই বেশি। শূন্য বলিয়া বোধ হইবে । যাহাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করা আমার কর্তব্য তাহাদের সহিত নিকটআত্নীয়ের মতো ব্যবহার করিতে আমার লজ্জা বোধ হইবে । ইংরাজ তাহাদের আমোদপ্রমোদ আহারবিহার আসঙ্গপ্রসঙ্গ বন্ধুত্বপ্রণয় হইতে আমাদিগকে সর্বতোভাবে বহিষ্কৃত করিয়া দ্বার রুদ্ধ রাখিতে চাহে ; তবু আমরা নত হইয়া, প্ৰণত হইয়া, ছল করিয়া, কল করিয়া একটুখানি প্রবেশাধিকার পাইলে, রাজসমাজের একটু ঘ্ৰাণমাত্র পাইলে এত কৃতাৰ্থ হই যে, আপনার দেশের লোকের আত্মীয়তা সে গীেরবের নিকট তুচ্ছ বোধ হয়। এমন স্থলে, এমন দুর্বল মানসিক অবস্থায় সেই সর্বনাশী অনুগ্রহমদ্যকে অপেয়মম্পর্শং বলিয়া সৰ্বথা পরিহার করাই কর্তব্য । আরো একটা কারণ আছে। ইংরাজের অনুগ্রহকে কেবল গীেরব মনে করিয়া কেবল নিঃস্বাৰ্থভাবে ভোগ করাও আমাদের পক্ষে কঠিন । কারণ আমরা দরিদ্র, এবং জঠরানল কেবল সম্মান বর্ষণে শান্ত হয় না। আমরা অনুগ্রহটিকে সুবিধায় ভাঙাইয়া লইতে চাহি। কেবল অনুগ্রহনহে, সেইসঙ্গে কিছু অন্নেরও প্রত্যাশা রাখি। কেবল শেকহ্যান্ড নহে, চাকরিটা বেতনবৃদ্ধিটাও আবশ্যক। প্রথম দুই দিন যদি সাহেবের কাছে বন্ধুর মতো আনাগোনা করি তো তৃতীয় দিনে ভিক্ষুকের মতো হাত পাতিতে লজ্জা বােধ করি না। সুতরাং সম্বন্ধটা বড়োই হীন হইয়া পড়ে। এ দিকে অভিমান করি যে, ইংরাজ