পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

పిరితి -; রবীন্দ্র-রচনাৰঙ্গী এবং নিজের প্রতি শাস্তার অচ্ছেদ্য গুঢ় বন্ধন অনুভব করিবার অবসর পাইল । শাস্তার নিকটে অলিয়া আত্মসমপণ করিল। এদিকে প্রমদার সর্থীরা দেখিল অমর আর ফিরে না, তাহারা প্রত্যাশা করিয়াছিল বাধা পাইয়া অমরের প্রেমানল ৰিগুণ প্ৰজলিত হইয়া উঠিবে। তাহাতে নিরাশ হইয়া তাহারা নুনি কথার ছলে অমরকে আহবান করিতে লাগিল—অমর ফিরিল না ; সর্থীদের ইঙ্গিত বুঝিতেই পারিল না । ভগ্নহৃদয় প্রমদা অমরের প্রেমের আশা একেবারেই পরিত্যাগ করিল। মায়াকুমারীগণ গাহিল— বিদায় করেছ যারে নয়ন-জলে, এখন ফিরাবে তারে কিসের ছলে । जखंभ झूच * শাস্তা ও অমরের মিলনোৎসবে পুরনারীগণ কাননে সমাগত হইয়া আনন্দ গান গাহিতেছে। অমর যখন পুষ্পমালা লইয়া শাস্তার গলে আরোপণ করিতে যাইতেছে এমন সময় মান ছায়ার দ্যায় প্রমদা কাননে প্রবেশ করিল। সহসা অনপেক্ষিত ভাবে উৎসবের মধ্যে বিষাদপ্রতিমা প্রমদার নিত্যস্ত করুণ দীন ভাব অবলোকন করিয়া নিমেষের মতো আত্মবিশ্বত অমরের হস্ত হইতে পুষ্পমালা খসিয়া পড়িয়া গেল। উভয়ের এই অবস্থা দেখিয়া শাস্তা ও আর সকলের মনে বিশ্বাস হইল যে, অমর ও প্রমদার হৃদয় গোপনে প্রেমের বন্ধনে বাধা আছে । তখন শাস্ত ও সর্থীগণ অমর ও প্রমদার মিলন সংঘটনে প্রবৃত্ত হইল। প্রমদা কহিল, *আর কেন । এখন বেলা গিয়াছে, খেলা ফুরাইয়াছে, এখন আর আমাকে কেন । এখন এ মালা তোমরা পরো, তোমরা মুখে থাকে।” অমর শাস্তার প্রতি লক্ষ্য করিয়া কহিল, “আমি মায়ার চক্রে পড়িয়া আপনার সুখ নষ্ট করিয়াছি এখন আমার এই ভগ্ন সুখ এই স্নান মালা কাহাকে দিব, কে লইবে ?” শাস্ত ধীরে ধীরে কহিল, “আমি লইব । তোমার দুঃখের ভার আমি বহন করিব । তোমার সাধের ভুল প্রেমের মোহ দূর হইয়া জীবনের মুখ-নিশ। অবসান হইয়াছে—এই ভূলভাঙা দিবালোকে তোমার মুখের দিকে চাহিয়া আমার হৃদয়ের গভীর প্রশান্ত মুখের কথা তোমাকে শুনাইব ।” অমর ও শাস্তার এইরূপে মিলন হইল। প্রমদা শূন্ত হৃদয় লইয়া কাদিয়া চলিয়া গেল। মায়াকুমারীগণ গাহিল— এর সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মিলে না, শুধু মুখ চলে যায়, এমনি মায়ার ছলনা।