পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “আমি বিবেচনা করিতেছি, ওই পাঠান দুটাকে মারিয়া কেলিলে এ-বিষয়ে আর কোনো ভয়ের কারণ থাকিবে না।” মন্ত্রী কহিলেন, “একটা খুন চাপিয়া রাখাই দায়, তিনটা খুন সামলানো অসম্ভব । প্রজার জানিতে পরিবেই।” মন্ত্রী বরাবর নিজের কথা বজায় রাখিলেন । প্রতাপাদিত্য বলিয়া উঠিলেন, “তবে তে। আমি ভয়ে সারা হইলাম ! প্রজার জানিতে পারিবে । যশোহর রায়গড় নহে ; এখানে প্রজাদের রাজত্ব নাই । এখানে রাজা ছাড়া আর বাকি সকলেই রাজা নহে। অতএব আমাকে তুমি প্রজার ভয় দেখাইয়ে না। যদি কোনো প্রজ" এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোনো কথা কহে, তবে তাহার জিহা তপ্ত লৌহ দিয়া পুড়াইব ।” মন্ত্রী মনে মনে হালিলেন । মনে মনে কহিলেন-প্রজার জিহবাকে এত ভয় ! তথাপি মনকে প্রবোধ দিয়া থাকেন যে, কোনো প্রজাকে ভরাই না ! প্রতাপাদিত্য । শ্রাদ্ধশাস্তি শেষ করিয়৷ লোকজন লইয়া একবার রায়গড়ে ষাইতে হইবে । আমি ছাড়া সেখানকার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী আর তো কাহাকেও দেখিতেছি না । বৃদ্ধ বসন্ত রায় ধীরে ধীরে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন— প্রতাপাদিত্য চমকিয়৷ পিছু হটিয়া গেলেন। সহসা তাহার মনে হইল, বুঝি উপদেবতা । অবাক হইয়া একটি কথাও বলিতে পারিলেন না । বসন্ত রায় নিকটে গিয়া তাহার গায়ে হাত বুলাইয়। মৃদুস্বরে কহিলেন, “আমাকে কিসের ভয় প্রতাপ ? আমি তোমার পিতৃব্য । তাহাতেও যদি বিশ্বাস না হয়, আমি বৃদ্ধ, তোমার অনিষ্ট করিতে পারি এমন শক্তি আমার নাই ।” প্রতাপাদিত্যের চৈতন্য হইয়াছে, কিন্তু কথা বানাইয়া বলিতে তিনি নিতান্ত অপটু। নিরুত্তর হইয়া অবাক হইয়া দাড়াইয়া রহিলেন । পিতৃব্যকে প্রণাম করা *ईख श्ण नt । 階 বসন্ত রায় আবার ধীরে ধীরে কহিলেন, “প্রতাপ, একটা যাহা হয় কথা কও । যদি দৈবাৎ এমন একটা কাজ করিয়া থাক, যাহাতে আমাকে দেখিয়া তোমার লজ্জা ও সংকোচ উপস্থিত হয়, তবে তাহার জন্য ভাবিয়ে না । আমি কোনো কথা উত্থাপন করিব না। এস বৎস, দুই জনে একবার কোলাকুলি করি। আজ অনেকদিনের পর দেখা হইয়াছে ; আর তে অধিক দিন দেখা হুইবে না ।” এতক্ষণের পর প্রতাপাদিত্য প্রণাম করিলেন ও উঠিয়া পিতৃব্যের সহিত কোলাকুলি করিলেন। ইতিমধ্যে মন্ত্ৰী আস্তে আস্তে গৃহ হইতে বাহির হইয়া