পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@为事 রবীন্দ্র-রচনাবলী ছাড়িয়া থাকিতে চাহিত না । সেই প্রতাপ বড়ো হইল, তাহার বিবাহ দিয়া দিলাম, তাহাকে সিংহাসনে বসাইলাম, তাহার সন্তানদের কোলে লইলাম—সেই প্রতাপ আজ স্বহস্তে এই লেখা লিথিয়াছে খা সাহেব ?? 劇 মুক্তিয়ার খার চোখের পাতা ভিজিয়া আসিল, সে অধোবদনে চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। ion বসন্ত রায় জিজ্ঞাসা করিলেন, "দাদা কোথায় ? উদয় কোথায় ?” মুক্তিয়ার খাঁ কহিল, “তিনি বন্দী হইয়াছেন। মহারাজের নিকট বিচারের নিমিত্ত প্রেরিত হইয়াছেন।” বসন্ত রায় বলিয়া উঠিলেন, “উদয় বন্দী হইয়াছে ? বন্দী হইয়াছে খা সাহেব ? আমি একবার তাহাকে কি দেখিতে পাইব না ?” মুক্তিয়ার র্থ জোড়হাত করিয়া কহিল, “না জনার, হুকুম নাই।” বসন্ত রায় সাশ্রনেত্রে মুক্তিয়ার খার হাত ধরিয়া কহিলেন, “একবার আমাকে দেখিতে দিবে না খাঁ সাহেব !” মুক্তিয়ার কহিল, “আমি আদেশপালক ভূত্য মাত্র।” বসন্ত রায় গভীর নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “এ সংসারে কাহারও দয়ামায়া নাই, এসো সাহেব, তোমার আদেশ পালন করে৷ ” মুক্তিয়ার তখন মাটি ছুইয়া সেলাম করিয়া জোড়হস্তে কহিল, “মহারাজ, আমাকে মার্জনা করিবেন—আমি প্রভুর আদেশ পালন করিতেছি মাত্র, আমার কোনো দোষ নাই।” বসন্তু রায় কহিলেন, “না সাহেব, তোমার দোষ কী ? তোমার কোনো দোষ নাই। তোমাকে আর মার্জন করিব কী ?” বলিয়া মুক্তিয়ার ধার কাছে গিয়া তাহার সহিত কোলাকুলি করিলেন ; কহিলেন, “প্রতাপকে বলিয়ে, আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিয়া মরিলাম। আর দেখো খাঁ সাহেব, আমি মরিবার সময় তোমার উপরেই উদয়ের ভার দিয়া গেলাম। সে নিরপরাধ—দেখিয়ো অন্যায় বিচারে সে যেন আর কষ্ট না পায় ।” ! বলিয়া বসন্তু রায় চোখ বুজিয়া ইষ্টদেবতার নিকট ভূমিষ্ঠ হইয়া রহিলেন, দক্ষিণ হস্তে মালা জপিতে লাগিলেন ও কহিলেন, “সাহেব এইবার ।” মুক্তিয়ার র্থ ডাকিল, “আবদুল ।” আবদুল মুক্ত তলোয়ার হস্তে আসিল । মুক্তিয়ার মুখ ফিরাইয়া সরিয়া গেল। মুহূর্ত পরেই রক্তাক্ত আসি হস্তে আবদুল গৃহ হইতে বাহির হইয়া আসিল । গৃহে রক্তস্রোত বহিতে লাগিল।