য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র ( ) খেলনাওয়ালাকে সেই বই আনিয়ে দিতে হুকুম করতে হয়েছিল— আমি আগে জানতেম, এ দেশে একটা কলাইয়ের দোকান যেমন প্রচুররূপে দরকারি, বইয়ের দোকানও তেমনি । . . . . t ইংলণ্ডে এলে সকলের চেয়ে চোখে পড়ে লোকের ব্যস্ততা । রাস্তা দিয়ে যারা চলে তাদের মুখ দেখতে মজা আছে— বগলে ছাতি নিয়ে হুস ছল করে চলেছে, পাশের লোকদের উপর ভ্ৰক্ষেপ নেই, মুখে যেন মহা উদ্বেগ, সময় তাদের ফাকি দিয়ে মা পালায় এই তাদের প্রাণপণ চেষ্টা । সমস্ত লগুনময় রেলোয়ে। প্রতি পাচ মিনিট অস্তর এক-একটা ট্রেন যাচ্ছে । লগুন থেকে ব্রাইটনে আসবার সময় দেখি, প্রতি মুহূর্তে উপর দিয়ে একট, নিচে দিয়ে একট, পাশ দিয়ে একট, এমন চারি দিক থেকে হুস হাস করে ট্রেন ছুটেছে। সে ট্রেনগুলোর চেহারা লগুনের লোকদেরই মতে, এদিক থেকে ওদিক থেকে মহা ব্যস্তভাবে হাসফাস করতে করতে চলেছে । দেশ তো এই এক রক্তি, দু-পা চললেই ভয় হয় পাছে সমুদ্রে গিয়ে পড়ি, এখানে এত ট্রেন যে কেন ভেবে পাই নে। আমরা একবার লণ্ডনে যাবার সময় দৈবাৎ ট্রেন মিস করেছিলেম, কিন্তু তার জন্যে বাড়ি ফিরে আসতে হয় নি, তার আধ ঘণ্টা পরেই আর-এক ট্রেন এসে হাজির । এ-দেশের লোক প্রকৃতির আজুরে ছেলে নয়, কারুর নাকে তেল দিয়ে তাকিয়া ঠেসান দিয়ে বসে থাকবার জো নেই। একে তো আমাদের দেশের মতো এ-দেশের জমিতে আঁচড় কাটলেই শস্ত হয় না, তাতে শীতের সঙ্গে মারামারি করতে হয় । তা ছাড়া শীতের উপদ্রবে এদের কত কাপড় দরকার হয় তার ঠিক নেই– তার পরে কম খেলে এ-দেশে বঁচিবার জো নেই ; শরীরে তাপ জন্মাবার জন্যে অনেক খাওয়া চাই । এ-দেশের লোকের কাপড়, কয়লা, খাওয়া অপর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে চলে না, তার উপরে আবার মদ আছে । আমাদের বাংলার খাওয়া নামমাত্র, কাপড় পরাও তাই। এ-দেশে যার ক্ষমতা আছে সেই মাথা তুলতে পারে, দুর্বল লোকদের এখানে রক্ষা নেই— একে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ তাতে কার্যক্ষেত্রে সহস্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোখারুখি করছে। i. ক্রমে ক্রমে এখানকার দুই-এক জন লোকের সঙ্গে আমার আলাপ হতে চলল। একটা মজা দেখছি, এখানকার লোকেরা আমাকে নিতাস্ত অবুঝের মতো মনে করে। একদিন Dr.– এর ভাইয়ের সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়েছিলেম। একটা দোকানের সম্মুখে কতকগুলো ফটোগ্রাফ ছিল, সে আমাকে সেইখানে নিয়ে গিয়ে ফটোগ্রাফের ব্যাখ্যান আরম্ভ করে দিলে— আমাকে বুঝিয়ে দিলে যে, একরকম যন্ত্র দিয়ে ওই
