পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুরোপ-যাত্রীর ডায়ারী 4ఎరీ J o: উপর যখন উঠলুম মুহূর্তের মধ্যে এক জাহাজ দৃষ্টি আমাদের উপর বর্ষিত হল। যদি তার কোনো চিহ্ন দেবার ক্ষমতা থাকত তাহলে আমাদের সর্বাঙ্গ কটা কালো ও নীল ছাপে ভৰুে যেত। জাহাজটি প্রকাও। তার সংগীতশালী এবং ভোজনগৃহের ভিত্তি শ্বেতপ্রস্তরে মণ্ডিত। বিদ্যুতের আলো এবং ব্যাণ্ডের বান্তে উৎসবময়। অনেক রাত্রে জাহাজ ছেড়ে দিলে । ৩০ আগস্ট। আমাদের এ-জাহাজে ডেকের উপরে আর-একটি দোতলা ডেকের মতো আছে । সেটি ছোটো এবং অপেক্ষাকৃত নির্জন । সেইখানেই আমরা আশ্রয় গ্রহণ করলুম। আমার বন্ধুটি নীরব এবং অন্যমনস্ক । আমিও তদ্রুপ । দূর সমুদ্রতীরের পাহাড়গুলো রৌদ্রে ক্লান্ত এবং ঝাপসা দেখাচ্ছে। একটা মধ্যাহতন্দ্রার ছায়া পড়ে । যেন অস্পষ্ট হয়ে এসেছে । . খানিকটা ভাবছি, খানিকট লিখছি, খানিকটা ছেলেদের খেলা দেখছি । এজাহাজে অনেকগুলি ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে আছে ; আজকের দিনে যেটুকু চাঞ্চল্য সে কেবল তাদেরই মধ্যে । জুতোমোজা খুলে ফেলে তারা আমাদের ভেকের উপর কমলালেবু গড়িয়ে খেলা করছে— তাদের তিনটি দাসী বেঞ্চির উপরে বসে নতমুখে নিস্তব্ধভাবে সেলাই করে যাচ্ছে এবং মাঝে মাঝে কটাক্ষপাতে যাত্রীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। বহুদূরে এক-আধটা জাহাজ দেখা যাচ্ছে । মাঝে মাঝে সমুদ্রে এক-একট। পাহাড় জেগে উঠেছে, অন্তর্বর কঠিন কালে দগ্ধ তপ্ত জনশূন্ত। অন্যমনস্ক প্রহরীর মতো সমুদ্রের মাঝখানে দাড়িয়ে তারা উদাসীনভাবে তাকিয়ে আছে, সামনে দিয়ে কে আসছে জে যাচ্ছে তার প্রতি কিছুমাত্র খেয়াল নেই। এইরকম করে ক্রমে স্বর্যাস্তের সময় হল । “কাসল অফ ইণ্ডোলেন্স” অর্থাৎ কুঁড়েমির কেল্লা যদি কাকেও বলা যায় সে হচ্ছে জাহাজ । বিশেষত গরম দিনে প্রশাস্ত, লোহিতসাগরের উপরে। যাত্রীরা সমস্ত বেলা ডেকের উপর আরামকেদারায় পড়ে ভ্রর উপরে টুপি টেনে দিয়ে দিবাস্বপ্নে তলিয়ে রয়েছে। চলবার মধ্যে কেবল জাহাজ চলছে এবং তার দুই পাশের আহত নীল জল . নাড়া পেয়ে অলস আপত্তির ক্ষীণ কলম্বরে পাশ কাটিয়ে কোনোমতে একটুখানিমাত্র সরে যাচ্ছে । , حبیبہr o . স্বৰ্ষ অন্ত গেল। আকাশ এবং জলের উপর চমৎকার রং দেখা দিয়েছে। সমুত্রের . জলে একটি রেখামাত্র নেই। দিগন্তবিস্তৃত অটুট জলরাশি যৌবনপরিপূর্ণ পরিস্ফুট