যুরোপ-যাত্রীর ডায়ারী ఆeవీ , কারণটা সাধারণের হৃদয়গ্রাহী হ’ক বা না হ'ক এখানকার লোকের সঙ্গে হেী-ডু-ফুডু বলে, ই করে রাস্তায় ঘাটে পর্যটন করে, থিয়েটার দেখে, দোকান ঘুরে, কলকারখানার তথ্য নির্ণয় করে—এমন কি, সুন্দর মুখ দেখে আমার শ্রাপ্তি বোধ হয়েছে ।
- অতএব স্থির করেছি এখন বাড়ি ফিরব ।
৭ অক্টোবর । টেম্স জাহাজে একটা ক্যাবিন স্থির করে আসা গেল। পরশু জাহাজ ছাড়বে। y ৯ অক্টোবর। জাহাজে ওঠা গেল। এবারে আমি এক । আমার সঙ্গীরা বিলেতে রয়ে গেলেন। আমার নির্দিষ্ট ক্যাবিনে গিয়ে দেখি সেখানে এক কক্ষে চারজনের থাকবার স্থান ; এবং আর-একজনের জিনিসপত্র একটি কোণে রাশীকৃত হয়ে আছে । বাক্স-তোরঙের উপর, নামের সংলগ্নে লেখা আছে ‘বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস ।" বলা বাহুল্য, এই লিখন দেখে ভাবী সঙ্গ মুখের কল্পনায় আমার মনে অপরিমেয় আনন্দের সঞ্চার হয় নি। ভাবলুম ভারতবর্ষের রোদে ঝলসা শুকনো খটখটে হাড়-পাক অত্যস্ত বাজালো ঝুনো অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানের সঙ্গে আমাকে এক জাহাজে পুরেছে । গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছি এমন সময়ে একজন অল্পবয়স্ক সুশ্ৰী ইংরেজ যুবক ঘরের মধ্যে ঢুকে আমাকে সহাস্যমুখে শুভপ্রভাত অভিবাদন করলেন—মুহূর্তের মধ্যে আমার সমস্ত আশঙ্কা দূর হয়ে গেল। সবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইনি ভারতবর্ষে যাত্র করছেন । এর শরীরে ইংলণ্ডবাসী ইংরেজের স্বাভাবিক সহৃদয় ভদ্রতার ভাব এখনো সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ণ রয়েছে। 4. ך. ১০ অক্টোবর । সুন্দর প্রাতঃকাল । সমুদ্র স্থির। আকাশ পরিষ্কার। স্বৰ্ষ উঠেছে । ভোরের বেলা কুয়াশার মধ্যে দিয়ে আমাদের ডান দিক থেকে অল্প অল্প তীরের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। অল্পে অল্পে কুয়াশার যবনিকা উঠে গিয়ে ওয়াইট দ্বীপের পার্বত্য তাঁর এবং ভেণ্ট নর শহর ক্রমে ক্রমে প্রকাশিত হয়ে পড়ল । এ জাহাজে বড়ো ভিড় । নিরিবিলি কোণে চৌকি টেনে যে একটু লিখব তার জো নৈই, সুতরাং সম্মুখে ষা কিছু চোখে পড়ে তাই চেয়ে চেয়ে দেখি । -- ইংরেজ মেয়ের চোখ নিয়ে আমাদের দেশের লোক প্রায়ই ঠাট্টা করে, বিড়ালের চোখের সঙ্গে তার তুলনা করে থাকে। কিন্তু এমন সর্বদাই দেখা যায়, তারাই যখন আবার বিলেতে আসে তখন স্বদেশের হরিণনয়নের কথাটা আর বড়ো মনে করে না । যতক্ষণ দুরে আছি কোনো বালাই নেই, কিন্তু লক্ষ্যপথে প্রবেশ করলেই ইংরেজ সুন্দরীর দৃষ্টি আমাদের অভ্যাসের আবরণ বিদ্ধ করে অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করে।
