পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৭০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७९२ . . রবীন্দ্র-রচনাবলী (ဖို႔၊ দক্ষিণ আকাশে তপ্ত স্বর্ণবর্ণের প্রলেপ, তরল অগ্নির মতো জলরাশির মধ্যে স্বৰ্ষ.s -অন্তমিত, এবং বামে স্বর্যাস্তের কিছু পূর্ব হতেই চক্ৰোয়ের স্বচনা। জাহাজ থেকে । পূর্বদিগন্ত পর্যন্ত জ্যোংস্কারেথা ঝিকঝিক করছে। ; : জাহাজের ডেকের উপরে এবং কক্ষে কক্ষে বিদ্যুদীপ জলে উঠল। ছটার সময় বাজল ডিনারের প্রথম ঘণ্ট। বেশ-পরিবর্তন উপলক্ষে সকলে স্ব স্ব কক্ষে প্রবেশ করলে। আধ ঘণ্টা পরে দ্বিতীয় ঘণ্টা। ভোজনগৃহে প্রবেশ করা গেল। সারি সারি নরনারী বসে গেছে। কারো বা কালো কাপড়, কারো রঙিন কাপড়, কারো বা শুভ্র বক্ষ অর্ধ-অনাবৃত। মাথার উপরে শ্রেণীবদ্ধ বিদ্যুৎ-আলোক । গুনগুন আলাপের । সঙ্গে কাটাচামচের টুংটাং ঠুংঠাং শব্দ মুখরিত, এবং বিচিত্র খাদ্যের পর্যায় পরিচারকদের হাতে হাতে নিঃশব্দ স্রোতের মতো যাতায়াত করছে। আহারের পর ডেকে গিয়ে শীতল বায়ু সেবন । কোথাও বা যুবকযুবতী অন্ধকার কোণের মধ্যে চৌকি টেনে নিয়ে গিয়ে গুনগুন করছে, কোথাও বা দু-জনে জাহাজের বারান্দা ধরে ঝুকে পড়ে রহস্যালাপে নিমগ্ন, কোনো কোনো জুড়ি গল্প করতে করতে ডেকের আলোক ও অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ক্রতপদে একবার দেখা দিচ্ছে একবার অদৃপ্ত হয়ে যাচ্ছে, কোথাও বা পাচ-সাতজন স্ত্রীপুরুষ এবং জাহাজের কর্মচারী জটলা করে উচ্চহাস্তে প্রমোদকল্লোল উচ্ছসিত করে তুলছে । অলস পুরুষের কেউ বা বসে কেউ বা দাড়িয়ে কেউ বা অর্ধশয়ান অবস্থায় চুরট টানছে, কেউ বা স্মোকিং সেলুনে কেউ বা নিচে খাবার ঘরে হুইস্কি সোডা পাশে রেখে চারজনে দল বেঁধে বাজি রেখে তাস খেলছে। ওদিকে সংগীতশালায় সংগীতপ্রিয় দু-চারজনের সমাবেশে গানবাজনা এবং মাঝে মাঝে করতালি শোনা যাচ্ছে । ! ক্রমে সাড়ে দশটা বাজে, মেয়েরা নেবে যায়, ডেকের উপরে আলো হঠাৎ যায় নিৰে, ডেক নিশা নির্জন অন্ধকার হয়ে আসে। চারিদিকে নিশীথের নিন্তব্ধতা, চন্দ্রালোক এবং অনন্ত সমুদ্রের অশ্রান্ত কলধ্বনি। । ২৭ অক্টোবর। লোহিত সমুদ্রের গরম ক্রমেই বেড়ে উঠছে। ডেকের উপর মেয়েরা সমস্ত দিন তৃষাতুর হরিণীর মতো ক্লিষ্ট কাতর। তারা কেবল অতি ক্লাপ্তভাবে পাথা নাড়ছে, স্মেলিং সন্ট শুকছে, এবং সকরুণ যুবকেরা যখন পাশে এসে কুশল জিজ্ঞাসা করছে তখন নিমীলিত প্রায় নেত্রপল্লব ঈষৎ উষ্মীলন করে মানহাস্তে । কেবল গ্রীবাভঙ্গী দ্বারা আপন স্থকুমার দেহলতার একান্ত অবসন্নতা ইঙ্গিতে জানাচ্ছে । যতই পরিপূর্ণ করে টিফিন এবং লেবুর শরবৎ খাচ্ছে, ততই জড়ত্ব এবং ক্লাস্তি বাড়ছে, নেত্র নিদ্রানত ও সর্বশরীর শিথিল হয়ে আসছে।