পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やSbr রবীন্দ্র-রচনাবলী সেনাপতি বুঝিলেন, এবার রামাই তাহার উপর দ্বিতীয় আক্রমণ করিবে । চশমাটা চোখে তুলিয়া পরিলেন এবং বোতাম খুলিতে ও পরিতে লাগিলেন । রামাই কহিল, “উৎসবস্থলে যাইতে সেনাপতি মহাশয়ের কোনো আপত্তি থাকিতে পারে না, কারণ, এ তো আর যুদ্ধস্থল নয় ।” রাজা ও মন্ত্রী ভাবিলেন, ভারি একটা মজার কথা আসিতেছে ; আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ?” রামাই | সাহেবের চক্ষে দিনরাত্রি চশমা আঁটা । ঘুমাইবার সময়েও চশমা পরিয়া শোন, নহিলৈ ভালো করিয়া স্বপ্ন দেখিতে পারেন না । সেনাপতি মহাশয়ের যুদ্ধে যাইতে আর কোনো আপত্তি নাই। কেবল পাছে চশমার কাচে কমানের গোলা লাগে ও কাচ ভাঙিয়া চোখ কানা হইয়া যায়, এই যা ভয় কেমন মহাশয় ? সেনাপতি চোখ টিপিয়া কহিলেন, “তাহা নয় তো কী ?” তিনি আসন হইতে উঠিয়া কহিলেন, রাজা সেনাপতিকে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হইতে কহিলেন, “যাত্রার সমস্ত উদযোগ করো । আমার চৌষট্টি দাড়ের নৌকা যেন প্ৰস্তুত থাকে ৷” মন্ত্রী ও সেনাপতি প্ৰস্থান করিলেন । রাজা কহিলেন, “রামাই, তুমি তো সমস্তই শুনিয়াছ । গতবারে শ্বশুরালয়ে আমাকে বড়োই মাটি, করিয়াছিল ।” রামাই । আজ্ঞা হা, মহাবাজের লাঙ্গুল বানাইয়া দিয়াছিল । রাজা হাসিলেন, মুখে দন্তের বিদ্যুৎছটা বিকাশ হইল বটে, কিন্তু মনের মধ্যে ঘোরতর মেঘ কবিয়া উঠিল । এ সংবাদ রামাই জানিতে পারিয়াছে শুনিয়া তিনি বড়ো সস্তুষ্ট নহেন । আর কেহ জানিলে ততটা ক্ষতি ছিল না । অনবরত গুড়গুড়ি টানিতে লাগিলেন । রামাই কহিল, “আপনার এক শ্যালক আসিয়া আমাকে কহিলেন, ‘বাসর - রে তোমাদের রাজার লেজ প্রকাশ পাইয়াছে ; তিনি রামচন্দ্ৰ, না। রামদাস ? এমন তো পূর্বে জানিতাম না ।” আমি তৎক্ষণাং কহিলাম, পূর্বে জানিবেন কিরূপে ? পূর্বে তো ছিল না । আপনাদের ঘরে বিবাহ করিতে আসিয়াছেন তাই যস্মিন দেশে যদাচার অবলম্বন করিয়াছেন ৷ ” রাজা জবাব শুনিয়া বড়োই সুখী | ভাবিলেন, রামাই হইতে তাহার এবং তাহার পূর্বপুরুষদের মুখ উজ্বল হইল ও প্রতাপাদিত্যের আদিত্য একেবারে চির-রাহুগ্ৰস্ত হইল । রাজা যুদ্ধবিগ্রহের বড়ো একটি ধার ধারেন না। এই-সকল ছােটােখাটাে ঘটনাগুলিকে তিনি যুদ্ধবিগ্রহের ন্যায় বিষম বড়ো করিয়া দেখেন । এতদিন তাহার ধারণা ছিল যে তাহার ঘোরতর অপমানসূচক পরাজয় হইয়াছে। এ কলঙ্কেণ কথা দিনরাত্রি তাহার মনে পড়িত ও তিনি লজ্জায় পৃথিবীকে দ্বিধা হইতে অনুরোধ করিতেন । আড়া তাহার মন অনেকটা সাস্তুনা লাভ করিল যে সেনাপতি রামাই রণে জিতিয়া আসিয়াছে। কিন্তু তথাপি তাহার মন হইতে লজার ভার একেবারে দূর হয় নাই । রাজা রমাইকে কহিলেন, “রামাই, এবারে গিয়া জিতিয়া আসিতে হইবে । যদি জয় হয় ৩/* রামাই বলিল, “মহারাজ, জয়ের ভাবনা কী ? রমাইকে যদি অন্তঃপুরে লইয়া যাইতে পারেন, ত/* স্বয়ং শাশুড়ি ঠাকুরানীকে পর্যন্ত মনের সাধে ঘোল পান করাইয়া আসিতে পারি।” রাজা কহিলেন, “তাহার ভাবনা ? তোমাকে আমি অন্তঃপুরেই লইয়া যাইব ।” রামাই কহিল, “আপনার অসাধ্য কী আছে ?” রাজারও তাঁহাই বিশ্বাস । তিনি কী না করিতে পারেন ? অনুগতবর্গের কেহ যদি বলে, “মহারাজের জয় হউক, সেবকের বাসনা পূৰ্ণ করুন।” মহামহিম রামচন্দ্র রায় তৎক্ষণাৎ বলেন, “হা, তাহাঁই হইবে।” কেহ যেন মনে না করে এমন কিছু কাজ আছে, যাহা তাহা দ্বারা হইতে পারে না । তিনি স্থির্ণ করিলেন, রামাই ভাড়কে প্রতাপাদিত্যের অন্তঃপুরে লইয়া যাইবেন, স্বয়ং মহিষী-মাতার সঙ্গে বিদ্র”